ঢাকা সোমবার | ২৫শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ ডেস্ক
১৮ জুলাই, ২০১৮ | ১২:৪৪

খুলনার ৯ পাটকলে অবিক্রিত ৩শ কোটি টাকার পণ্য

tesst

খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে বাড়ছে উৎপাদিত পাটপণ্যের মজুদ। বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে ৩শ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ হাজার ৬৪৮ মেট্রিকটন পাটজাত পণ্য। সময় মতো পণ্য বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে পাটকলগুলো। ফলে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি প্রদান ও কাঁচা পাট কিনতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া টাকার অভাবে বিদায়ী অর্থ বছরে পাট ক্রয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি এসব পাটকল।

আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া এবং সিনথেটিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শেখ রহমত উল্লাহ।

বিজেএমসি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, খুলনার খালিশপুর, আটরা-গিলাতলা ও যশোরের অভয়নগর শিল্পাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল রয়েছে। যার অধিকাংশই ষাটের দশকে স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, পিপলস (খালিশপুর), স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, কার্পেটিং এবং যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি (জেজেআই) জুটমিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে এসব পাটকল বিজেএমসির আওতায় আনা হয়। এ অঞ্চলের ৯টি পাটকলে ৫ হাজার ১০৯টি তাঁত স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে অসংখ্য তাঁত অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে নানা জটিলতার কারণে বর্তমানে চলছে মাত্র ২ হাজার ৬০৭ টি। এসব পাটকলে স্যাকিং (মোটা বস্তা), হেসিয়ান (পাতলা চট), সিবিসি (কার্পেট বেকিং ক্লথ) এবং ইয়ার্ন (সুতা) এই চার ধরনের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।

উৎপাদিত এসব পণ্য সিরিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান, মিশরসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারার কারণে গত ১১ জুলাই পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে ৩২ হাজার ৪৩০ মেট্রিকটন উৎপাদিত পাট পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩শ কোটি টাকা।

এদিকে, পাটকলগুলোর পণ্য বিক্রি না হওয়ায় অর্থ সংকটে পড়ে যেমন শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনই কাঁচা পাট ক্রয়েও হিমসিম খেতে হচ্ছে। ফলে বিদায়ী (২০১৭-২০১৮) অর্থ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত পাটক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৫২ কুইন্টাল। তবে ক্রয় করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ২৬৭ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশ।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মো. মিজানুর রহমান জানান, অর্থ সংকট দেখিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ নিয়িমিত মজুরি পরিশোধ করে না। বর্তমানে ৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে চলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মিলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হলে মিলে আর আর্থিক সংকট থাকত না এবং নিয়িমিত মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ পরিষদের কার্যকরী আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, বিশ্বে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারায় বাড়ছে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ। এর খেসারত দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। পাটকলগুলোতে বর্তমানে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। একই সাথে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। অর্থ কষ্টে অর্ধাহারে অনাহারে দিন পার করছে এসব শ্রমিক পরিবার। নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারলে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য অবিক্রিত থাকবে না। একই সাথে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারলে পাটকলগুলোতে অর্থ সংকট কমে যাবে। তিনি পাটকলগুলোর পুরাতন যন্ত্রপাতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. মুজিবর রহমান মল্লিক জানান, পাটপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদিত পণ্যের মজুদ বাড়ছে। বর্তমানে মিলে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মূল্যের পাটপণ্য মজুদ রয়েছে। তবে দ্রুত এসব পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শেখ রহমত উল্লাহ জানান, মজুদকৃত পণ্য অচিরেই বিক্রি করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি বিদেশি বায়ারদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। চলতি মাসে সিরিয়ায় ৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার বেল পাটপণ্য রফতানি হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার টাকা মূল্যের ৫ হাজার বেল পাটপণ্য খুলনা থেকে রফতানি হবে। এরপর আরও ১০ হাজার বেল পাট একই দেশে রফতানি হবে। এছাড়া আগস্ট নাগাদ সুদানে ১ লাখ ৫০ হাজার বেল পাট রফতানি হবে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪শ কোটি টাকা। ফলে মজুদকৃত পণ্য আর থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘আফ্রিকা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি বাজার। এই বাজারকে ধরে রাখতে পারলে উৎপাদিত পণ্য মজুদ থাকবে না।’

বিষয়সমূহঃ