ঢাকা সোমবার | ২৫শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সুমন কুমার দাস
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ | ১১:২৬

হবে কি ওদের দু’জনের অপেক্ষার অবসান?

tesst

অপেক্ষা; কথাটির মধ্যেই যেনো লুকিয়ে মানব মনের আকুলতা। আর সেই আকুলতা যখন একজন মায়ের জন্য সন্তানের; তখন তো আরও বেদনাদায়ক অনুভূতি। এমনই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই। সেদিস সকাল থেকেই খুব রোদ। মনে হচ্ছিলো না যে ঘরের বাইরে বের হই। কিন্তু কর্ম ব্যস্ততায় বাদ পড়ে নি ওইদিনটি। দুপুরের পরই বের হলাম বুম হাতে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার বালকের উদ্দেশ্যে। নিবাসের ভেতরে ঢুকতেই যেনো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আকাশ; সেই সাথে ভেঙ্গে পড়লেন জাহিদ আর ইমন। অনেকে ভাবছেন এরা আবার কে? তাদেরসহ সকলের জন্য বলছি, ‘জাহিদ আর ইমন’ বর্তমানে ওই পরিবারের নিবাসী। আমরা সবাই জানি, দুঃস্থ্য-অসহায়, নিঁখোজ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, অনাথ শিশুদের স্থান দেয়া এ নিবাসে। ওরাও এরকমই। চলতি বছরের প্রথম দিকে, সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে তাদের পাওয়া যায় উদ্বাস্তুর মতো। পরে, ওই দুই উপজেলার সদর থানার অফিসার ইনচার্জদের সহায়তায় তাদের প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার বালকে পাঠানো হয়। তাদের হাত ধরেই শুরু জাহিদ আর ইমনের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়। প্রবেশন অফিসার নাসির উদ্দিন শাহ্’র তথ্যমতে, থানা থেকে দু’জনকেই হস্তান্তরের পর কমপক্ষে ৭দিন কোনো কথা বলেনি তারা। এরপর অন্যান্য শিশুদের সাথে থাকা-খাওয়া, খেলাধুলা ও ভালোবাসায় একটু একটু কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু এখন অনেক নিশ্চুপ ইমন। তার চলাফেরায় অস্বাভাবিকতার লক্ষণ। কিন্তু বলতে পারে অনেককিছু। প্রশ্ন করেছিলাম নাম কি তোমার? অস্পষ্ট কণ্ঠে বলেছিলো, ইমন; খেয়েছো? মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করছিলো । তবে মজার বিষয় যখন জানতে চেয়েছিলাম, কি দিয়ে? তখন উত্তরে বললো, হাম্বা দিয়ে। এরপর জানতে চেয়েছিলাম, বাসা কোথায়? তখন আর কোনো কথা বের হয় নি ইমনের মুখে। অজানা এক নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন ছিলো সে। এরই মধ্যে হঠাৎ জাহিদের আগমন। ওর সাথেও কথা হলো একইভাবে। ইমনের তুলনায় জহিদের বয়স একটু বেশি। তাই একটু স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলো সে। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এখানে থাকতে কেমন লাগে? জাহিদ বলছিলো, খুব ভালো। এখনকার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও ভালো। মানুষগুলোও খুব মিশুক। খুব উৎফুল্লতার সাথে সে বললো, আমি গোবিন্দিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে পড়ি আমি। কিন্তুপরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায় জাহিদ। ঠিক তখনই সহমত পোষণ করলেন ইমনও। এ ব্যাপারে আমাদের কথা হয়, সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মানিক চন্দ্র রায়ের সাথে। তিনি জানান, জাহিদ-ইমনের মতো শিশুদের আমরা এখানে পরিচর্যা করে থাকি। তবে, তাদের ঘরে ফেরানের জন্যও আমাদের বেশকিছু কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ছবিসহ পোষ্ট করা, লোকাল পত্রিকায় নিঁখোজ সংবাদ প্রদানসহ অন্যান্য জেলার থানার সাথে যোগাযোগ করা। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে সমন্বয় ও যোগাযোগ সাধন করা। এসময় তাদেরকে নিজের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি। এভাবেই নিজের পরিবার-পরিজন থেকে হারিয়ে আবারও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন জাহিদ-ইমনের মতো অনেকে। তাদের এ অপেক্ষার প্রহর পাক পূর্ণতা-এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক: কমিউনিটি ফেলো, রেডিও সারাবেলা।

বিষয়সমূহঃ