ঢাকা শুক্রবার | ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ | ০৮:৩১

ভারতকে হুঁশিয়ারি চীনের ; মালদ্বীপে সৈন্য পাঠাবেন না

tesst

মালদ্বীপে ভারত সামরিক হস্তক্ষেপ করলে তার তীব্র বিরোধিতা করবে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, এর ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। অবশ্য, চীনের আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্রের নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।

মালদ্বীপের বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় ভারতের সামরিক সাহায্য চেয়ে মঙ্গলবার কলম্বো থেকে আবেদন করেন মোহাম্মদ নাশিদ। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ যে বিচারপতি ও রাজনৈতিক নেতাদজের বন্দি করে রেখেছেন, তাদের মুক্ত করার আবেদন করেন ভারতকে। সেই প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এমনকী, সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে চীন। বুধবার বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শ্যুয়াং জানান, আন্তর্জাতিক মহলের উচিত মালদ্বীপের সার্বভৌমত্বকে মাথায় রেখে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা। তৃতীয় পক্ষের উচিত নয় এমন পদক্ষেপ নেয়া যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। তার মতে, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।

যদিও, চীনের এই আপত্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ নাশিদ। এদিন কলম্বো থেকে তিনি টুইটারে জানিয়ে দেন, ভারতের উচিত অবিলম্বে সামরিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। চীনের প্রস্তাবকে খারিজ করে তিনি জানান, আলোচনায় পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।

ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের হয়ে জোরাল সমর্থন করে নাশীদ এদিন বলেন, ভারত কখনই অন্য দেশ কব্জা করে না। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৮৮ সালেও একইভাবে ভারত সামরিক সাহায্য করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পর চলে গিয়েছিল। তার দাবি, সকল মালদ্বীপবাসী অতীতেও ভারতের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছিল, আজও তাদের দিকেই তাকিয়ে।

গত সপ্তাহে ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত এই নৈসর্গিক দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় চরম রাজনৈতিক সঙ্কট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে সাবেক প্রেসিডেন্ট সহ সকল ৯ রাজনৈতিক বন্দির অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয় সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট।

এর পাশাপাশি, ইয়ামিনের দলত্যাগী ১২ এমপির আসনও ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আদালতের ওই রায়ের ফলে, ৮৫ আসন-বিশিষ্ট মালদ্বীপের পার্লামেন্টে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেত। ফলে, ইয়ামিনের ইমপিচমেন্ট অবশ্যম্ভাবী হতো।

কিন্তু, প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। বলেন, উল্টে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট তার এক্তিয়ার-বহির্ভুত কাজ করছে। ইয়ামিনের দফতরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মানা হবে না।

এরপরই, সোমবার দেশে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। সেইসঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদসহ দু’জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমকে। এরপরই, চাপের মুখে গভীর রাতে আগের নির্দেশ প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্টের বাকি তিন বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের ভোলবদল
একেবারে ভোলবদলে দুই বিচারপতিকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দণ্ডিত ৯ জন বিরোধী রাজনীতিককে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলো মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের অবশিষ্ট তিন বিচারক এক বিবৃতিতে আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন।

সপ্তাহখানেক আগে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ এবং বিরোধী দলের ১২ এমপিকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনাকে ‘অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বর্ণনা করে তাদের মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। একইসঙ্গে ওই এমপিদের সংসদ সদস্যপদও বহাল রাখার কথা ঘোষণা করেন তারা। আদালতের ওই রায়ের পর মালদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট মালদ্বীপের ৮৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্লামেন্টের কারকর্ম স্থগিত করে দেন। কারাদণ্ড পাওয়া ১২ এমপির মধ্যে ৯ জন কারাভোগ করছেন। এছাড়া, স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা আবদুল্লাহ সিনান ও ইলহাম আহমেদ রোববার দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

২৬টি প্রবাল প্রাচীর ও ১১৯২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ভারত মহাসাগরের এই রাষ্ট্রে ভরা পর্যটন মরশুমে জরুরি অবস্থা জারি ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ঘটনায় বিভিন্ন দেশও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। চীন, আমেরিকা, ভারত, ব্রিটেন, বাংলাদেশসহ অনেক দেশই দেশটিতে থাকা তাদের নাগরিকদের সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে।

যদিও প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও জনগণের চলাফেরা, চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর জরুরি অবস্থার প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, জরুরি অবস্থা জারি প্রেসিডেন্টের মরিয়া ভাবের কথাই ইঙ্গিত করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিরোধীদল এমডিপি-র এই নেতা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান। এর দু’বছর পর সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নাশিদ ও ১২ এমপিকে কারাদণ্ড দেয় মালদ্বীপের আদালত, যে রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও তীব্র আপত্তি ছিল।

বিষয়সমূহঃ