ঢাকা শনিবার | ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঢাকা: সারা বিশ্বে যখন তথ্য সুরক্ষা বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তখন বাংলাদেশে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত। এ নিয়ে সংবিধানে নাগরিকের অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও এখনো কোনো আইন হয়নি।
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ হচ্ছে রাস্তার পাশে উন্মুক্তভাবে। নিবন্ধনের সময় গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপসহ ব্যক্তিগত পরিচয়ের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ কাজটি যেসব কর্মী করছেন তারা কম শিক্ষিত এবং গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন নন। সার্বিকভাবে এই ব্যবস্থায় গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কতোটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে একজন গ্রাহকের ব্যক্তিগত এসব তথ্য ব্যবহার করে বাজারে অবৈধভাবে সিম বিক্রির নজিরও তৈরি হয়েছে। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের তিনজন কর্মীকে গত ৫ নভেম্বর রংপুরে এমন অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশের সিআইডি সদস্যরা। তথ্য চুরি করে নিবন্ধিত করা টেলিটকের অপরাজিতা ও বর্ণমালা প্যাকেজের ১ হাজার ১৫০ পিস সিম তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। তারা দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে সংগ্রহের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে নিবন্ধিত সিম বিক্রি করে। এসব সিম দিয়ে অপরাধীরা বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো বলে জানিয়েছে সিআইডি।
একজন গ্রাহক যখন আঙ্গুলের ছাপ ও তার সব তথ্য দিয়ে একটি সিম কেনেন, তার সব তথ্য সংশ্লিষ্ট অপারেটরের সার্ভারে থাকে। গ্রাহকের অজান্তে সেই তথ্য কপি করে এমনকি আঙ্গুলের ছাপও কপি করে অনলাইনে আরও ফরম পূরণ করে বাড়তি সিম নিবন্ধন করে এই চক্র। সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। একজন সর্বোচ্চ ১৫টি সিম কিনতে পারেন। চক্রের সদস্যরা সেই সুযোগটি নিতো। শুধু টেলিটক নয়, চক্রটি সব অপারেটরের সিম এভাবে জালিয়াতি করছে। অন্য অপারেটরের কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত রয়েছে।
২০১৬ সালের ২১ মে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান ১২০টি রবির সিম নিবন্ধন করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করেছে জালিয়াতচক্র। এর কিছুদিন পর রাজধানীতে এয়ারটেলের লক্ষাধিক নিবন্ধিত সিমসহ অপারেটরের দুজন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর ময়মনসিংহেও লক্ষাধিক নিবন্ধিত সিম ও ভিওআইপি সরঞ্জামসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ (সাত) কোটির বেশি। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি, যা ২০২০ সাল নাগাদ ৫ (পাঁচ) কোটিতে দাঁড়াবে। মানুষ জীবনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ও আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ডিভাইসগুলোতে ব্যয় করছে। কিন্তু এখনও খুব কম মানুষই জানে যে, ব্যবহৃত ডিভাইস ও অনলাইন সেবা থেকে অসংখ্য ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এ কে এম নজরুল হায়দার আগামীনিউজ২৪.কমকে বলেন, “যে কোনো মাধ্যমে আমরা প্রচুর ব্যক্তিগত ডাটা দিই বা এমনকি মোবাইলে কোনো অ্যাপস ডাউনলোড করতেও অনেক তথ্য দিতে হয়। অথচ যারা এগুলো নিচ্ছে তারা কীভাবে সংরক্ষণ রাখছে তার কোনো আইন নেই, নেই কোন শাস্তির ব্যবস্থাও।”
তিনি বলেন, “অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের তথ্য নিচ্ছে কিন্তু তারা কীভাবে সেগুলো রাখছে সেটি নিশ্চিত নয়।”
মোবাইল ফোন অপারেটর রবির কমিউনিকেশনস অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর আগামীনিউজ২৪.কমকে বলেন, “নিবন্ধনের কাজটি আমাদের ডিলারদের মাধ্যমে করা হয়। এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের ডিভাইস থেকে গ্রাহকের তথ্য অন্যের হাতে যাওয়া বা অপব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কোনো কর্মী অপব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
তথ্য সুরক্ষা বিষয়ক অধিকারকর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (অনুচ্ছেদ ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (অনুচ্ছেদ ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো আইনে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাই নেই।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, আইনের মাধ্যমে নাগরিকের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রম সঠিকভাবে আগাবে না। তাই সরকারের উচিত দ্রুত এ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করা।
আগামীনিউজ২৪.কম/কেএম
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম