ঢাকা বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ
২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ | ১১:৪১

কথাসাহিত্যিক শওকত আলী আর নেই

tesst

কথাসাহিত্যিক শওকত আলী আর নেই। রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। তার মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

শওকত আলীর বড় ছেলে চিকিৎসক আরিফ শওকত পল্লব জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শওকত আলীকে। সেখানে প্রথমে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি জটিলতা ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গল্প ও উপন্যাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

শওকত আলী ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্ম গ্রহণ করেন।

শ্রীরামপুর মিশনারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে শওকত আলীর বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে কলকাতায় আক্রমণ শুরু হলে তাঁরা স্বপরিবারে রায়গঞ্জে ফিরে আসেন। রায়গঞ্জে তার মা সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন এবং বাবা ডাক্তারি পেশা শুরু করেন। রায়গঞ্জ করনেশন ইংলিশ হাইস্কুলে শওকত আলীকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয়া হয়। ১৯৫১ সালে তিনি করনেশন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫১ সালে তিনি দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।

মায়ের মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালে শওকত আলী তার ভাইবোনদের নিয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুরে স্থানান্তরিত হন। পরবর্তীতে তার বাবাও ১৯৫৩ সালে দিনাজপুরে চলে আসেন।

দেরিতে ভর্তি হতে আসার কারণে শওকত আলী আইএসসিতে ভর্তি হতে না পেরে ১৯৫১ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে আইএ ভর্তি হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আইএ পাস করেন। আইএ পাস করার পর ওই কলেজেই বিএতে ভর্তি হন।

কলেজ জীবনে কমিউনিস্ট দলের সাথে সংযুক্ত হন এবং বিভিন্ন মিছিল, আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয় এবং ডিসেম্বরে তিনি ছাড়া পান। ১৯৫৫ সালে বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এমএ-তে ভর্তি হন ও ১৯৫৮ সালে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৫৫ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। একই সময়ে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার নিউজ ডেস্কে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে দিনাজপুরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে এবং ১৯৫৯ সালে ঠাকুরগাঁও কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ১৯৮৮ সালে জেলা গেজেটিয়ারের ঢাকার হেড অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে পরিচালক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৯ সালে সরকারি সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় লেখালেখি শুরু করলেও ভারত ভাগের পর কলকাতার বামপন্থীদের ‘নতুন সাহিত্য’ নামে একটি পত্রিকায় প্রথম তার গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তাঁর অনেক গল্প, কবিতা এবং শিশুদের জন্য লেখা প্রকাশিত হয়। তার দক্ষিণায়নের দিন, কুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিন যেগুলোকে ত্রয়ী উপন্যাস বলা হয়, যার জন্য তিনি ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬) লাভ করেন।