ঢাকা মঙ্গলবার | ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঢাকা: রাজধানীর রাস্তায় চুক্তিভিত্তিক এবং ফিটনেসহীন বাস চালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) থেকে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে গাড়ি রাস্তায় নামাতে হবে।
চুক্তির ভিত্তিতে চালকদের হাতে বাস তুলে দেওয়ার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় যে পাল্লাপাল্লি হয়, তা ঠেকাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবহন পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চুক্তি অর্থাৎ মালিক কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা দেওয়ার শর্তে চালকদের গাড়ি চালাতে দেওয়ার কারণে ওই অর্থ নিশ্চিত করতে এবং নিজেদের আয় অনেক বাড়ানোর জন্য চালকরা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান, যে কারণে প্রায়ই রেষারেষিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে।
এসবের প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ মিলে চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো বন্ধ এবং নিয়োগকৃত ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। বুধবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি) ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম এবং মহাখালী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালের নেতারা।
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢাকার সব পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-আগামীকাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে কোনো কোম্পানির মালিক চালকের সঙ্গে কন্ট্রাক্টে গাড়িতে পারবেন না। চালালে তার নিবন্ধন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে আমাদের।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, চুক্তিতে গাড়ি চললে চালকরা অতিরিক্ত টাকার জন্য অসম প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। পাল্লাপাল্লি করে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজধানীর বাস আবার কাউন্টার সার্ভিসে চলবে। চালকরা বাস চালাবে, প্রতিটি কোম্পানির চেকার রাস্তায় থাকবে। সারাদিনের আয় মালিকের কাছে চলে যাবে। চালক-শ্রমিকরা তাদের নির্ধারিত মজুরি পাবেন। আগামীকালের পর কেউ চুক্তিতে গাড়ি চালালে আমরা তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য সুপারিশ করবো। আর সে মালিক যদি আমাদের সদস্য হয়, তাহলে ওই মালিককে আমাদের সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
রাস্তায় কাউন্টারের জায়গা নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ জানান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কাউকে চালক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, কাল থেকে রাজধানীর সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সায়েদাবাদ ও মহাখালীসহ ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার আগে গাড়ির যাবতী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গন্তব্যে যাত্রা করবেন।
‘এগুলো দেখভালের জন্য টার্মিনালের স্টার্টিং পয়েন্টে দায়িত্বপ্রাপ্তরা থাকবেন। এজন্য মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট এবং চালকের লাইসেন্স চেক করবেন। কোনো ব্যত্যয় থাকলে ওই গাড়ি বন্ধ রাখা হবে। আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
ঢাকায় চলা রংচটা, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলো ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মেরামত করে চলাচল উপযোগী করে তোলারও আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ৪ হাজার নতুন বাস নামানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নেরও কথা উল্লেখ করেন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া বাসের পাল্লাপাল্লিতে চাপায় পড়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সড়ক পরিবহন আইনও অনুমোদন করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই মালিক-শ্রমিক কর্তৃপক্ষ চুক্তির ভিত্তিতে গাড়ি রাস্তায় নামানোর পদ্ধতি থেকে সরে এলো বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম