ঢাকা রবিবার | ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঢাকা: আপনার নাম, মোবাইল ফোন নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা দেবেন। বিনিময়ে তাৎক্ষণিক পেয়ে যাবেন ২০ টাকা। এটি দেয়া হবে মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্ট রিচার্জের মাধ্যমে। -এভাবেই তথ্য সুরক্ষা আইনের অনুপস্থিতিতে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে নিচ্ছে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি ছাড়াও বিভিন্ন ছাড় বা চমকপ্রদ উপহারের নামে মানুষের এমন ব্যক্তিগত তথ্য নেয়ার চিত্র দেখা গেছে বেসিস সফটএক্সপো-২০১৮ এ।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরেমশন সার্ভিসেস বা বেসিস।
মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ‘কিকসা’ নামের অনলাইনে পণ্য বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠান দর্শনার্থীদের ২০ টাকার বিনিময়ে একটি কুপন পূরণ করতে বলছে। একইসঙ্গে মোবাইলের মেসেজ অপশন থেকে নির্দিষ্ট নিয়মে মেসেজ পাঠাতে বলা হচ্ছে। তাদের কথামতো তথ্য দিয়ে টাকাও গ্রহণ করছেন অনেকে। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলা হলে ১০ জনে ১০ জনই এই প্রতিবেদককে জানান যে, ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষা বিষয়ক কোনো নীতিমালা আছে কি না সে বিষয়ে তারা জানেন না এবং ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও তথ্য সংগ্রহের সময় এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ফোনের সক্রিয় সংযোগ বা সিম সংখ্যা ১৪ কোটি সাত লাখ। একই সময় মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ। এসব ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের আধুনিক বিপনন কার্যক্রম চালাচ্ছে ফোন নম্বর ও ইমেইলের মাধ্যমে।
বহির্বিশ্বে নানা কৌশলে সংগ্রহ করা ব্যক্তিগত এসব তথ্য কালোবাজারে বিক্রি হয় মোটা অংকে। পরে সেগুলো দিয়ে নানা ধরণের প্রতারণামূলক কাজ করা হয়, যার পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে মূল্য তথ্যগুলো যার তাকে।
এছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ইস্যুতে যেসব ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলো হলো, অপ্রত্যাশিত ইমেইল, প্রবঞ্চনা, অনুসন্ধান ও দখল, ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে তথ্যভান্ডার তৈরি, অযাচিত ফোন, ক্ষুদেবার্তা ইত্যাদি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন বলছে, শক্তিশালী অনলাইন ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অনুপস্থিতিতে অনেক কোম্পানি তাদের ভোক্তা ও ক্রেতাদের ব্যক্তিগত আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং ভোক্তাদের এসব তথ্য তারা লাভের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে। ভোক্তাদের বোঝা প্রয়োজন যে তাদের তথ্যের সঠিক মূল্য আসলে কতটা এবং কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করা জানা উচিৎ।
সংগঠনটির উপদেষ্টা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ একেএম নজরুল হায়দার বলেন, বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কেউ ইচ্ছা করলেই যাতে আরেক নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেজন্যই শক্ত আইন থাকা উচিত। এর সঙ্গে সঙ্গে আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতাও প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কিভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
আগামীনিউজ২৪.কম/কেএম
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
শিরোনাম