ঢাকা শুক্রবার | ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অটো থেকে কলেজের সামনে নামলেন আয়েশা আক্তার। রাস্তা থেকে হাঁটতে হাঁটতে ঢুকলেন কলেজের ভিতরে। আমি রাস্তার এপাশ থেকে খেয়াল করছিলাম। এখন আপনারা অনেকে ভাবছেন, এ বিষয় খেয়াল করার কি হলো? এটা তো দিনে হাজার বার করি। কিন্তু বিষয় তো হাটার নয়; তার দু’হাত নেই। আমার প্রশ্ন তাহলে পড়ালেখা করছে কিভাবে? তাই উৎসাহ বশত পিছু নিলাম তার। ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে তাকাতেই তো আমি অবাক। মেয়ে দু’পা দিয়ে লিখছেন। বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই সত্য। ৪৫মিনিটের ক্লাসের সকল নোট নিজ পা দিয়ে সম্পূর্ণ লিখে নিলেন তিনি। সম্প্রতি সাঘাটার উদয়ন মহিলা কলেজে এ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই।
আয়েশা আক্তার শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত নেই। কিন্তু এই বাধা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন তিনি। বাড়ি একই উপজেলার কচুয়া গ্রামে। ক্লাস শেষে কথা হয় আয়েশা আক্তারের সাথে। বললেন, ‘জীবনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। ছোটবেলা থেকে নিজ ইচ্ছায় এসেছি এ স্থানে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। তবে, পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি প্রত্যাশার থেকে বেশি। তাই তো পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে সফলভাবে সম্পন্ন করেছি এসএসসি ও এইচএসসি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পা দিয়ে লিখে বোর্ড পরীক্ষায় পেয়েছি ৩ দশমিক ৫০ পেয়েছি। আরেকটি কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বাসে চেহারায় হাসি ফুটলো আয়েশার। অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত নিজ ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে আসছেন তিনি। এখন পড়ালেখা শেষ করে চাকরী করাই তার স্বপ্ন। তবে, মানুষের জন্য কাজ করতে চান আয়েশা আক্তার; পাশে দাড়াতে চান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের পাশে। ’
কথা বলতে বলতে আমি পৌঁছে গেলাম আয়েশার বাড়িতে। আমাকে দেখে সবাই একটু অবাক। তবে, আতিথ্যিয়তার কমতি করলেন না তার মা সাহাজাদা বেগম। খেতে খেতে জানতে চাইলাম, আয়েশাকে পড়ালেখা করানোর আগ্রহ জন্মালো কিভাবে? ‘আমরা প্রথমে সম্মতি দেই নি, কিন্তু মেয়ের ইচ্ছে শক্তির কাছে হার মানতে হয়েছে আমাদের। এরপর থেকেই অবিরত সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহন করে আয়েশা। এরই মাঝে চেয়ারে এসে বসলেন, সমাজকর্মী ওরফে সাঘাটায় ফটো আপা নামে পরিচিত মোছা.সুলতানা শাশীমারা বেগম। তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, আয়েশা খুবই মেধাবী ও পরিশ্রমী। ইচ্ছে শক্তির জন্যই আজ সফলতা অর্জন করেছে সে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করলেন তিনি।
সকলের সাথে দেখা ও কথা বলার পরে আবারও রওনা হলাম, উদয়ন মহিলা কলেজের দিকে। কথা বললাম কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে। এসময় ‘প্রতিবন্ধী মানে প্রতিভাবন্ধী নয়’ উল্লেখ করে আয়েশার প্রশংসা করতে থামলেন না তিনি। তবে, শুধু পড়ালেখায় ভালো বললে ভুল হবে, আত্মসম্মানবোধের দিক থেকেও সাধারণ মানুষের থেকে ভিন্ন আয়েশা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়েও কখনও অন্যের কাছে মাথা নত করেন নি আয়েশা। নেন নি কোনো অর্থ সহায়তাও। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে সকলকে তার অনুসারী হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি। শুধু আয়েশা নয়; নিজ নিজ প্রচেষ্টার জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী সকল নারী-এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
লেখক: কমিউনিটি ফেলো, রেডিও সারাবেলা।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম