ঢাকা শনিবার | ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
একটি জানাকীর্ণ রাস্তা। পুলিশ একজন দাগী আসামিকে খুঁজছে। তাকে খুঁজে পেতে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে অপরাধী ব্যক্তির ছবি। রাস্তায় বসানো ক্যামেরাগুলো সেখানে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষের ছবি তুলে তাৎক্ষণিক ছবিগুলো গাণিতিক বিশ্লেষণ করে মিলিয়ে দেখছে অপরাধী ব্যক্তির কি-না।
গাণিতিক সব হিসাব কষার পর নেটওয়ার্ক থেকে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। তার অর্থ ভিড়ের মধ্য থেকে অপরাধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাড়া করে সেই অপরাধী ব্যক্তিটিকে ধরে হাজতে পাঠায়।
কিন্তু দেখা গেলো গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিটি অপরাধী নয়, তবে তাদের দুজনের মধ্যে চেহারায় কিছুটা মিল রয়েছে মাত্র।
অপরাধ দমনে সহায়ক হলেও অনেকে এই আশঙ্কার কথাও চিন্তা করছেন ক্রমবর্ধমান ফেস রিকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার বৃদ্ধির খারাপ দিক হিসেবে।
ফেসিয়াল রিকগনিশনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধি, হারানো ব্যক্তি ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের ধরা যেমন অনেক সহজ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রে গোপনে তার দেশের জনগণের ওপর নজরদারিও করা হচ্ছে।
‘রিয়েল-টাইম ফেসিয়াল রিকগনিশন’ অপরাধ দমনে নতুন সম্ভাবনা হিসেব দেখা দিলেও বিভিন্ন কারণে এর নেতিবাচক দিক নিয়েই চিন্তিত সবাই। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে নানা রকম ঝুকির মধ্যে রয়েছে—ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ও অপব্যবহারের সুযোগ।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ শুধু জনসাধারণের মধ্য থেকেই আসেনি। অনেক প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রযুক্তি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সিইও ঘোষণা দিয়েছেন—তারা পুলিশ বিভাগের কাছে এই চেহারা শনাক্ত করার প্রযুক্তি বিক্রি করবে না। তা ছাড়া একটি কোম্পানি এই ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিধিনিষেধ তৈরিতে এথিক্স বোর্ডও গঠন করেছে।
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের অংশিদার ও তাদের কর্মীরা বসদের বলেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যেন এ ধরনের ব্যবসা না করা হয়।
ফেসিয়া রিকগনিশন ফার্ম ‘কাইরন’-এর সিইও ব্রায়ান ব্রাকিন বলেছেন, ‘সময় চলে যাচ্ছে। তার পরও খুব বেশি দেরি হয়নি, এখনো সময় আছে এসব ঘটতে না দেওয়ার জন্য।’ তিনি নিজেও চান এই প্রযুক্তি যেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে না পড়ে।
ব্রাকিন নিজে একজন কৃষ্ণাঙ্গ তিনি জানান, অটো ফেস রিকগনিশনের কারণে তার নিজেরও সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো। এই প্রযুক্তি কালো মানুষদের খুব একটা ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে না বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এটা বলা যাবে না, চেহারা শনাক্ত করার প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের নাগরিদের কোনো ক্ষতি করবে না।
যদিও কিছু সায়েন্টিফিক স্টান্ডার্ড ও সরকারের বিধি-নিষেধসহ অনেক ক্ষেত্রেই অভিবাসীদের শনাক্ত, কোনো রাজতৈনিক দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্তে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফেসিয়াল রিকগনিশন
কোনো মানুষের ছবি এবং ভিডিওর গাণিতিক বিশ্লেষণ করে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে ফেসবুকে ছবি ট্যাগ, মোবাইল ফোনের ক্যামেরাই ছবির ফোকাস করতে ও আইফোন আনলক করতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমেরিকার অধিকাংশ পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষ এই প্রযুক্তির আওতায় চলে গেছে। সরকার জনগণের পাসপোর্ট ছবি ও ড্রাইভারস লাইসেন্সের ছবি ব্যবহার করে এই প্রযুক্তিতে কাজে লাগাচ্ছে।
এ ছাড়া এফবিআইসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেকদিন ধরেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে।
হতে পারে অসংখ্য ভুল
এই প্রযুক্তির কিছু সুবিধা থাকলেও ক্ষেত্র বিশেষে এর ভুলের ফলও মারাত্বক হতে পারে বলে এই প্রযুক্তির প্রসারকে প্রতিহত করতেই চাইছে সবাই। এটার একদিকে যেমন আইডেন্টিফিকেশনে সমস্যা হতে পারে আবার অন্যদিকে এর মাধ্যমে জনগণের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু হতে পারে বলেও মনে করছে অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসিয়াল রিকগনিশন কখনোই সম্পূর্ণ সঠিক হতে পারে না এবং পারবেও না। এটা দুটি ছবি দেখে কখনোই শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পার না যে ছবি দুটো একজনেরই। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাছাকাছি একটি ধারণা পেতে পারে, তবে শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সঠিক হবে না।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম