ঢাকা বুধবার | ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কাজী মুস্তাফিজ
১৭ আগস্ট, ২০১৮ | ১৪:৫৬

নজরুলের অপ্রকাশিত লেখা নিয়ে বই

tesst

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাতে লেখা অপ্রকাশিত কিছু কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে। এ উদ্যোগ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের।

পুরনো বহু গুরুত্বপূণ জিনিসপত্র জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আর্দ্র আবহাওয়াজনিত কারণে যতো দিন গড়াচ্ছে ততো সেগুলোর কালি উড়ে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এগুলোকে চিরস্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে নজরুলের পাণ্ডুলিপি প্রকাশ।

জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত ‘নজরুলের পাণ্ডুলিপি’ নামের বইটিতে ৮টি কবিতা, ৩৯টি গান ও ২টি ইসলামি ডুয়েট স্থান পেয়েছে। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান করা হবে। নজরুল গবেষণা ও চর্চায় বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

কী আছে পাণ্ডুলিপিতে:
নজরুল পাণ্ডুলিপিতে ৬টি লেখা আছে, যেগুলো এর আগে কোথাও প্রকাশ হয়নি। জাতীয় জাদুঘরেই কেবল এগুলো সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে চারটি হিন্দি গানও রয়েছে। এগুলোর শিরোনাম: ‘আমি যারে ভালোবাসি’, ‘গীত’, ‘আধুনিক’, ‘ভজন’, ‘ইসলামী ডুয়েট- তুমি হেরেমের বন্দিনী নহ, তুমি রওশন-বাতি…’ ও ‘আরো ফসল ফলাও’। এছাড়াও ‘তুমি বুঝিবে না মোরে’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ কবিতার মূল রূপও এসব পাণ্ডুলিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার অংশবিশেষ এখনো অন্য কোথাও প্রকাশ হয়নি।

এই পাণ্ডুলিপি প্রকাশের ভাবনা আসে যেভাবে:
বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেন জাতীয় জাদুঘরের সদ্য অবসর গ্রহণকারী মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। চলতি বছরের ১৭ জুন তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, জাতীয় জাদুঘরের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর কাছে মনে হয়েছে প্রকাশনার দিক থেকে জাতীয় জাদুঘর অনেক দুর্বল। এরপর তিনি এ সম্পর্কিত নানা উদ্যোগ নেন। সেসব উদ্যোগের একটি হলো নজরুলের পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই প্রকাশ।

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল জাদুঘরের প্রকাশনা বাড়ানো। জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা ১৯১৩ সালে। আর আমি যোগ দিয়েছি ২০১৪ সালে। আমি দেখলাম, প্রকাশনার দিক থেকে জাদুঘর দুর্বল। জাদুঘরের এক লক্ষ নিদর্শন আছে। সেগুলোর ওপর বই প্রকাশিত হওয়া দরকার মনে করলাম।

এরপর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ একটা প্রকল্প হাতে নেয়। এক লাখের মধ্যে বাছাই করে সাড়ে সাত হাজার নিদর্শনের ওপর ১৫ ভলিয়মি ক্যাটালগ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।  এই ক্যাটালগের মধ্যে প্রত্যেকটা আইটেমের বর্ণনা, ছবি এবং বিস্তারিত তথ্য থাকবে।

ফয়জুল লতিফ বলেন, দেখলাম নজরুল লিপির একটা বিরাট খনি আমাদের আছে। মূল পাণ্ডুলিপি নজরুলের হাতের লেখা। সেগুলো দিয়ে অনায়াসে একটি বই করা যায়। বইয়ের একদিকে নজরুলের হাতের লেখা, অন্যদিকে লেখাগুলো কম্পোজ করা থাকবে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থাকবে। যদি কেউ আগে এ সংক্রান্ত কোনো প্রকাশনায় ভুল করে থাকে সেটারও উল্লেখ থাকবে।

কেন এ ধরনের প্রকাশনার প্রয়োজনীয়তা মনে করলেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ- এ প্রসঙ্গে ফয়জুল লতিফ বলেন, আমরা মনে করি এটি একটি উল্লেখযোগ্য কাজ এজন্য যে, পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো শেষ পর্যন্ত কালিগুলো বেশি দিন টেকে না। কালিগুলি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে। যেই পরিবেশে রাখি না কেনো। সুতরাং সেগুলোকে একটা চিরস্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য আমরা একটা আলাদা বিভাগও করেছি। জাদুঘরে সংরক্ষিত যে সমস্ত হাতের লেখা আছে, যেমন আমাদের প্রচুর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জিনিসপত্র আছে, যেগুলো কালি উড়ে যাচ্ছে, উবে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলোকে স্ক্যান করে, পুনঃমুদ্রণ করা হবে।

“আরো একটি প্রস্তাব আমার অবসরের কিছু দিন আগে দিয়েছি যে, মুক্তিযুদ্ধের যে সমস্ত সংগ্রহ আছে সেগুলিরও, যেহেতু অন্য কোথাও নেই, ইউনিক (অদ্বিতীয়) কালেকশানস। এগুলো যতো দূর পারা যায় গবেষণা করে বই আকারে প্রকাশ করা।” বলেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

অজ্ঞাত ব্যক্তির লেখাগুলো
নজরুল পাণ্ডুলিপিতে প্রকাশিত বিষয়গুলোর বেশিরভাগ কাজী নজরুলের নিজ হাতে লেখা। তবে তিনটি হিন্দি ও একটি বাংলা গান রয়েছে (‘গীত’, ‘আধুনিক’, ‘ভজন’ ও ‘কতটুকু পরিচয়-’ শিরোনামে) যেগুলো নজরুলের রচিত হলেও সরাসরি তার হাতে লেখা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে বইটির সম্পাদক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, কিছু লেখা নজরুলের সরাসরি হাতে লেখা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও সেগুলো নজরুলের বলে স্বীকৃত। কারণ, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে এগুলোর পাণ্ডুলিপি পাওয়া। তিনি হলেন শওকত ওসমান। এছাড়াও মূল পাণ্ডুলিপির ভূমিকায় নজরুলের নিজ হাতে লেখা আছে। কিন্তু ভেতরের লেখাগুলো অজ্ঞাত কারো লেখা। নজরুল সব সময় সব লেখা নিজ হাতে লেখেননি। কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন, এমনও আছে।

১৯৮৭ সালের ১৪ এপ্রিল কবি নজরুলের ১১টি পাণ্ডুলিপি জাতীয় জাদুঘরের সে সময়কার মহাপরিচালক ড. এনামুল হকের কাছে হস্তান্তর করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কবি কাজী নজরুলের পাণ্ডুলিপিগুলো সংগৃহীত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে সপরিবারে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে তাঁর বাকি জীবন বাংলাদেশের কাটে। ১৯৭৬ সালে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্বও দেয়া হয়। ওই বছরের ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যুর পর তাকে সমাহিতও করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।

বিষয়সমূহঃ