ঢাকা সোমবার | ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাইবান্ধা রেলস্টেশন; ট্রেন থেকে নামতেই চোখে পড়লো ৯ বছর বয়সী আলীকে। বেলুন বিক্রি করে চালায় তার অভাবী সংসার। অনেক বছর আগেই বাবা মারা যায় তার। ঠিক যখন আলীর বয়স ২। তখন থেকেই ওর মায়ের উপার্জনে চলে সংসার। কিন্তু দাদা, বড় বোন হিল্লোল, ছোট ভাই রানার মুখে একবেলা ভাত তুলে দিতেই হিমশিম খেতে হয় তার মা মর্জিনা বেগমকে। ওইসময় মায়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ কাজ শুরু করে আলী। ব্যাগ হাতে নামতেই দৌঁড়ে এসে বেলুন নিবেন সাব; বেলুন নিবেন-এমন উক্তি শোনা যাচ্ছিলো তার মুখে। আমি ১০টাকা দিয়ে একটা বেলুন কিনলাম। সাথে কথাও বললাম। কেমন আছো? জবাবে ভালো আছি সাব। এতো সকালে কই থেকে আসলেন?-প্রশ্ন করছিলো আলী। আমি বললাম ঢাকায় একটা প্রশিক্ষণে গেছিলাম। প্রশিক্ষণ মানে ওখানে কি পড়ায়? কথা শুনে বুঝতে পারলাম; পড়ালেখা করার প্রচুর আগ্রহ তার। বললাম, না রে ওখানে কাজ শেখায়। এরই মধ্যে প্লাটফর্মে আরেকটি ট্রেন এসে থামলো। আবারও অন্য কোনো সাবের পেছনে দৌঁড়ালো আলী। তবে, পেছনে ঘুরতেই চকলেটসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতে দেখা গেলো রাইকে। রাইয়ের বয়স ১০। ওর সাথে আমর খুব ভাব। দেখা হলেই একঝাঁক মুখরোচক খাবার নিয়ে নেই ওর থেকে। আজও তাই করলাম। কিন্ত জানতে চাইলাম ভিন্ন কথা। ‘কি রে রাই, তোর কি কখনো পড়ালেখা করতে ইচ্ছে হয় নি?’ উত্তরে রাই স্থানীয় ভাষায় বলে, ‘ভাইয়া খুব ইচ্ছে করে। হামাঘরের পাশের বাড়ির সাবের বেটাবেটি যখন পড়বার যায়, তখন আরও বেশি ইচ্ছে করে। খারাপও নাগে। কিন্তু হামাঘরের কিছুই করবার পাই না। হামাঘরের অজগার দিয়াই তো সংসার চলবার নাগছে। ’ সেও চলে গেলো আলীর মতো। এ কথা শুনে ইচ্ছে হলো ওদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার। তাই হাঁটতে হাঁটতে রেললাইন ধরে চলে গেলাম ওদের পল্লীতে। তবে, খুঁজে পাই নি সবাইকে। কথা হলো সমিরন বিবি ও আর্জিনা বেগমের সাথে। তারাও বলেন, সংসারের চাহিদা মেটাতেই এতো কমবয়সে কাজ করতে দিছি। একা একা আর কতোই চালাই। তবে, কি পড়ালেখার সযোগ পাবে না গাইবান্ধার পথশিশুরা?-এমনই প্রশ্ন করেছিলাম শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার আবু জাফর সাবুর কাছে। এসময় তিনি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষামুখী কর্মসূচী গ্রহণের তাগিদ দেন। তবে, জেলার পথশিশুদের সমাজের মূলধারায় ফেরাতে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রধান। এ প্রসঙ্গে আমাদের কথা হয়, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পালের সাথে। এসময় পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলেন তিনি। তবে, সত্যি কি এসব শিশুর জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে?-এবিষয়ে আজও সন্দিহান গাইবান্ধার সচেতনমহল।
লেখক: কমিউনিটি ফেলো, রেডিও সারাবেলা।
বিষয়সমূহঃ
পরের সংবাদ
শিরোনাম