ঢাকা রবিবার | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি চলছে। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সাজা স্থগিত চেয়ে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য চলতি সপ্তাহেই হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
এরই মধ্যে মামলার ওকালতনামায়ও সই করেছেন নাজিমুদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া। গত শুক্রবার তার সই করা ওকালতনামার কপি সংশ্নিষ্ট আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতে ঘোষিত রায়ের সত্যায়িত কপি সংগ্রহের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদনও করা হয়েছে। এ মামলার অন্যতম আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সমকালকে জানান, আগামীকাল রোববার রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পেলে সোমবারের মধ্যেই আপিল করা হবে। এখন আপিলের ড্রাফটিং চলছে। পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে গ্রাউন্ড চূড়ান্ত করা হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, সত্যায়িত কপি প্রস্তুত হতে দেরি হলে আপাতত ফটোকপি দেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে আদালত এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত দেননি। ফটোকপি পেলে এর ভিত্তিতেই আপিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সত্যায়িত কপি পেয়ে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিনের আবেদন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন বলেন, আপিল ও জামিনের প্রস্তুতি চলছে। এটি একটি বড় রায়। প্রথমে উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করা হবে। সেটি গৃহীত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন এবং হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট বেঞ্চে দ্রুত শুনানির জন্য প্রার্থনা করা হবে। উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের।
আজ সংবাদ সম্মেলন :আজ শনিবার দুপুর ১২টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এতে জিয়া অরফানেজ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ও রায়ের পুরো বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিদলীয় সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি?
এদিকে দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছর সাজা পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধানের ৬৬(২ গ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নৈতিক স্খলনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নূ্যনতম দুই বছর কারাবাসে থেকে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে কেউ নির্বাচনে যোগ্য হবেন না। অবশ্য উচ্চ আদালতের একাধিক রায় অনুসারে, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল উচ্চ আদালত গ্রহণ করার পর তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যাতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, সে প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন দলটির আইনজ্ঞরা।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মতে, রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচনের বছরে খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এখন আইন ও রাজনৈতিক দুটো প্রক্রিয়ায় তারা এ মামলাটি মোকাবেলা করবেন। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পেলে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে উচ্চ আদালতে নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি হবে না। অন্যদিকে, আইনি প্রক্রিয়ায় পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।
তারা বলছেন, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াসহ সংশ্নিষ্ট আসমিদের বিরুদ্ধে এতিমখানার নামে অর্থ পাচারের মামলাটি করা হয়েছিল। এখানে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। আদালত রায় দিয়েছেন। আপিলেরও সুযোগ আছে। আইনি প্রক্রিয়াতেই এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। তবে আইন বিশ্নেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে যদি আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং তা খালেদার বিরুদ্ধে গেলে তখন পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। তিনি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সেজন্য সর্বাত্মক আইনি লড়াই চালানো হবে। এরই মধ্যে আপিলের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। রায় পাওয়ার পরপরই আপিল দায়ের করা হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অনেক দূরে। এর মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তা ছাড়া স্বাভাবিক নিয়মে বিচার কাজ হলে নির্বাচনের আগে আপিলও নিষ্পত্তি হবে না।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতে, খালেদা জিয়া কারাগারে থেকেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। হাইকোর্ট যদি ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন তাহলে তার জামিন চাওয়ারও সুযোগ তৈরি হবে।
অবশ্য খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আপিল বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে- নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারও সাজা হয় তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেরও দুটি রায় আছে, যেখানে বলা হয়েছে- আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যাবে না; এর ফলে তিনি দ প্রাপ্ত হননি এ বিবেচনায় নির্বাচন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে, পারবেন না। এখন তার ব্যাপারে আপিল বিভাগ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সমকালকে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সরকার তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে। জনগণ এটি মানবে না। আপিলের প্রস্তুতি চলছে।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম