ঢাকা সোমবার | ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ ডেস্ক
৪ আগস্ট, ২০১৮ | ১২:৪৫

বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে বদলে দিয়েছিলো ওসামা বিন লাদেনের জীবন

tesst (AP Photo)

নিহত আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম কোন সংবাদপত্রকে দেয়া তার প্রথম সাক্ষাতকারে বলেছেন, ওসামা ছিলেন একজন ‘ভালো ছেলে’। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন।

ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার ভাষায় এক ‘কাল্ট’ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়েন এবং পুরোপুরি বদলে যান।

তিনি আরো বলেন, তিনি তার ছেলেকে বার বার সাবধান করেছিলেন ওই গ্রুপটি থেকে দূরে থাকার জন্য।

কিন্তু ওসামা বিন লাদেন কখনো তার মা-কে বলেননি যে তিনি কি করছেন, কারণ তার মাকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন।

মনে করা হয় যে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে যে সন্ত্রাসী হামলা হয় – যাতে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবন আক্রান্ত হয় এবং দু হাজারের বেশি লোক নিহত হয় – তার আদেশ ওসামা বিন লাদেনই দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের এাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক অভিযানে ২০১২ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।

গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মার্টিন চুলোভের নেয়া সাক্ষাৎকারে বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম বলেন, কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার সময় ওসামা বিন লাদেন কিছু লোকের সংস্পর্শে আসেন – এবং তারাই তার ছেলের মগজ ধোলাই করে, যখন তার বয়স ছিল ২০এর কোঠায়।

আলিয়া ঘানেমের কথায় – “বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই লোকেরাই তাকে বদলে দেয়, সে একেবারে অন্যরকম মানুষ হয়ে যায়।”

“আপনি বলতে পারেন এটা ছিল একটা কাল্ট – আমি তাকে সবসময়ই বলতাম ওদের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সে কখনো স্বীকার করেনি সে কি করছে, কারণ আমাকে সে খুবই ভালোবাসতো।”

১৯৮০র দশকে ওসামা আফগানিস্তানে চলে যান রাশিয়ার দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে। তার ভাই হাসান – যিনি এই সাক্ষাতকারের সময় উপস্থিত ছিলেন, যোগ করলেন – “প্রথম দিকে যারই তার সাথে দেখা হয়েছে সে-ই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। তারপরই সে হয়ে উঠলো মুজাহিদ ওসামা।”

তার মা ঘানেম বলছিলেন, “ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তারসব টাকাপয়সা আফগানিস্তানের পেছনে খরচ করেছে। পারিবারিক ব্যবসার ছুতো করে সে সন্তর্পণে কোথায় কোথায় চলে যেতো।”

তিনি কি কখনো সন্দেহ করেছিলেন যে তার ছেলে জিহাদি হয়ে উঠতে পারে?

“আমার মনে কখনো এমন ভাবনা আসেনি।”

যখন জানতে পারলেন তখন কেমন লেগেছিল।

“আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম, এমনটা হোক আমি চাই নি। কেন সে এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে যাবে?”

বিন লাদেন পরিবার বলছে, তারা ওসামাকে সর্বশেষ দেখেছেন ১৯৯৯ সালে, আফগানিস্তানে। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন।

“জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যা তারা রুশদের হাত থেকে দখল করেছিল। ” – ঘানেম বলছিলেন, “আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল, আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাতো। একটা পশু জবাই করে একটা ভোজ দেয়া হলো। তাতে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো।”

ওসামা বিন লাদেনের বাবা ইয়েমেনি হলেও তার মা আলিয়া ঘানেমের জন্ম এক সিরিয়ান আলাওয়াইট শিয়া পরিবারে।

তিনি সৌদি আরবে আসেন ১৯৫০এর দশকের মাঝামাঝি, আর ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিন বছর পর ওসামার বাবাকে তালাক দেন তিনি, বিয়ে করেন আল-আত্তাসকে, যিনি বিন-লাদেনদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যেরই একজন প্রশাসক ছিলেন।

ওসামার বাবা কমপক্ষে ১১জন স্ত্রীর গর্ভে ৫৪টি পুত্রকন্যার জন্ম দেন।

ওসামার আরেক ভাই আহমদ গার্ডিয়ানকে বলেন, নাইন-ইলেভেনের ১৭ বছর পরও তাদের মা ওই ঘটনার জন্য ওসামাকে দোষ দিতে চান না। তিনি দোষ দেন তার চারপাশের লোকদেরকে।

আহমদ বলছিলেন, তাদের মা শুধু ওসামাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন, জিহাদি ওসামাকে তার কখনো জানা হয় নি।

পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন যখন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর হাতে নিহত হন – তখন তার যে স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন – তারা এখন জেদ্দায় থাকেন। তাদের শহরের মধ্যে চলাফেরার অধিকার আছে তবে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি নেই।

আলিয়া ঘানেম বলছেন, “আমি ওসামার হারেমের সাথে প্রায় সপ্তাহেই কথা বলি। তারা কাছেই থাকে। ”

ওসামা বিন লাদেনের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ২৯ বছর বয়স্ক হামজার কথা বিন লাদেন পরিবারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন গার্ডিয়ানের সাংবাদিক ।

হামজা এখন আফগানিস্তানে আছে বলে ধারণা করা হয়।

গত বছর তাকে একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র, এবং তাকে আলকায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ছত্রছায়ায় তার পিতার ‘উত্তরসূরী’ বলে মনে করা হয়।

হাসান বলছিলেন, “হামজা বলেছিল, সে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আমি তার কথা আর শুনতে চাই না।”

“তার সাথে দেখা হলে আমি বলতাম ‘আল্লাহ যেন তোমাকে পথ দেখান – তুমি যা করছো তা নিয়ে দু’বার ভাবো, তুমি তোমার আত্মার এক ভয়ংকর অংশে পা ফেলছো, তোমার পিতার পথ নিও না । “

বিষয়সমূহঃ