ঢাকা শনিবার | ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মূল্য সংযোজন কর ফাঁকির অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট সোমবার দেশের সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথক চিঠি দিয়ে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিতের অনুরোধ করেছে।
এলটিইউ কর্তৃপক্ষ বলেছে, রবি আজিয়াটার কাছে সরকারের প্রায় ১৯ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বকেয়া রয়েছে। পাওনা ওই ভ্যাট পরিশোধে কয়েক দফা নোটিশ করা হলেও তাতে কোনো সাড়া দেয়নি তারা। ফলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়।
জানা যায়, রবির ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে এলটিইউর এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই টিম চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির গুলশানের করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি-রেকর্ড পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির ঘটনার প্রমাণ পায়। এর পর পাওনা ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে দাবিনামা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর ২৬ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. মতিউর রহমান বলেন, বকেয়া রাজস্ব আদায়ে প্রাথমিক দাবিনামা পাঠানো হলেও রবি কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি। তার পরও কয়েক দফা যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, অন্যান্য কোম্পানি ইন্টারকানেকশন ফি ও মার্জার ফির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট দিলেও, রবি আজিয়াটা দেয় না। ফলে সরকারের বকেয়া ভ্যাট আদায়ে প্রচলিত আইনে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
এদিকে, ব্যাংক হিসাব জব্দের পদক্ষেপ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যমূলক দাবি করেছে রবি কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ করা হলে রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর সমকালকে বলেন, বকেয়া ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি অনেক আগের ঘটনা। এতে আপত্তি আছে। কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়া একতরফাভাবে এনবিআর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। তিনি আরও জানান, এ দাবির বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হবো এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।
সোমবার রাতে রবি এক বিবৃতিতে বলেছে, এটা কর ফাঁকি নয়। এনবিআরের সঙ্গে রবির দীর্ঘদিনের আপত্তি চলমান। চিঠির উল্লিখিত মূল্য সংযোজন কর আইনের ২৬-এর খ উপধারা ৫-এ বলা হয়েছে ‘এই ধারার বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে করদাতার অনুকূলে শুনানির সুযোগ সংক্রান্ত আইনের অন্যান্য বিধানাবলি অনুসরণ করতে হবে। দুঃখজনক এই যে, এ ক্ষেত্রে বিধান অনুযায়ী রবি কোনো শুনানির সুযোগ পায়নি।
জানা যায়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লেখা পৃথক চিঠিতে এলটিইউ কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ মাসে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ২৬ হাজার টাকার অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক্ক, ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬১ টাকার স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর অপরিশোধিত ভ্যাট ৮১ লাখ টাকা, সিমের ওপর কম প্রদর্শিত সম্পূরক শুল্ক্ক ও ভ্যাট এবং বিটিসিএলকে প্রদত্ত সেবার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৮১ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৪ টাকাসহ মোট ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। মূল্য সংযোজন কর আইন অনুযায়ী রবির ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব আগামী ৩ কার্যদিবসের জন্য জব্দ করতে স্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। এ বিষয়ে এলটিইউর এক কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাট না দিলে পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি অভিযোগ করেন, রবির বিরুদ্ধে আরও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম