ঢাকা শনিবার | ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ক্রমেই ডলার ও টাকার বিপরীতে দর হারাচ্ছে ভারতের রুপি। শক্তিশালী হচ্ছে টাকা। ডলারের বিপরীতে গত ৯ মাসে ১২ শতাংশ রুপির অবমূল্যায়ন করেছে ভারত। রুপির দাম কমে যাওয়ায় রফতানি আয়ে সুবিধা পাবে ভারত। কিন্তু বিষয়টি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক খাতের জন্য। বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মুদ্রা বিনিময় হার প্রায় সমান ছিল। তখন ভারতীয় প্রতি রুপি কিনতে বাংলাদেশি এক দশমিক শূন্য এক টাকা লাগত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে এক টাকা ২৯ পয়সায় পাওয়া যেত ভারতীয় এক রুপি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রুপির বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল এক দশমিক ১৬ টাকা। অর্থাৎ ভারতীয় এক রুপি কিনতে বাংলাদেশকে এখন দিতে হচ্ছে এক টাকা ১৬ পয়সা। গত ৯ মাসে রুপির বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
শুধু টাকা নয়, মার্কিন ডলারের বিপরীতেও রুপির অবমূল্যায়ন করেছে ভারত। গত ৯ মাসে ডলারের বিপরীতে ১২ শতাংশ রুপির অবমূল্যায়ন করেছে ভারত। গত ৭০ বছরে ডলারের বিপরীতে রুপির দর অবমূল্যায়ন করেছে দুই হাজার ১০০ শতাংশ।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের রুপির অবমূল্যায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, এতে বাংলাদেশের চেয়ে আরও কম দামে একই পণ্য দিতে পারবে ভারত। বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশ ও ভারত তৈরি পোশাক রফতানি করে, সেসব দেশের বাজার হাতছাড়া হবে বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘টাকার বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়নে আমাদের ক্ষতি হবে। এটি রফতানি বাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন ভারত। দেশটি টেক্সটাইল পণ্য রফতানি বৃদ্ধি করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য প্রণোদনাও দিচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল তাদের রয়েছে। আমাদের চেয়ে কম দামে পোশাক দিলে, বাংলাদেশের এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচাক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার ও টাকার বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়নের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে বাংলাদেশেও পণ্য রফতানি বৃদ্ধি পাবে ভারতের। পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে অবৈধপথে পণ্য আসা। একই পণ্য আগের চেয়ে আরও কম দামে কিনতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর দেওয়া তথ্য মতে, গত অর্থবছরে তিন হাজার ৬১ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। মোট রফতানি হয়েছে তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের। এ হিসাবে গত বছরে মোট রফতানির ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের।
বিজিএমইএর তথ্য মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। ২০১৭ সালে ইইউতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানি করেছে এক হাজার ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।
শেয়ার বিজের সৌজন্যে
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম