ঢাকা শনিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ ডেস্ক
২ জানুয়ারি, ২০১৮ | ২২:০৬

শপথ নিলেন তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রী

tesst রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ পাঠ করান -ফোকাস বাংলা

বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে আরেক দফা সম্প্রসারণ হলো মন্ত্রিসভার। মঙ্গলবার শপথ নিয়েছেন তিনজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর প্রতিমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী। বুধবার নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হতে পারে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এই চারজনকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে বিজয় বাংলা কি-বোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার সংসদ সদস্য না হওয়ায় টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বাকিরা সরাসরি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হবেন।

এই চারজনকে নিয়ে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪। তাদের মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরও পাঁচজন।

এর আগে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের বঙ্গভবনে নিয়ে যেতে বিকেলে সচিবালয় থেকে পাঠানো হয় চারটি গাড়ি। শপথের জন্য বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে তারা সবাই বঙ্গভবনে পৌঁছে যান। শপথ পড়াতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে দরবার হলে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তিন মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং মোস্তাফা জব্বারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি। পরে হয় প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর শপথ। শপথ নেওয়ার পর তিন মন্ত্রী টেবিলে বসে শপথবাক্যে স্বাক্ষর করেন। প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সোমবার ওই চারজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে থাকতে বলা হয়েছিল শপথের জন্য। তারপরই গণমাধ্যমে তাদের নাম আসতে থাকে। তবে মন্ত্রিসভার আরও রদবদলের যে গুঞ্জন ছিল তা সত্যি হয়নি।

৭২ বছর বয়সী নতুন মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

মন্ত্রিসভার নতুন মুখ এ কে এম শাহজাহান কামাল লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ। ৭২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপাতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তার ভাই অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি।

আরেক নতুন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিচিত উদ্যোক্তা। আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ৬৮ বছর বয়সী জব্বার ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার যুক্ত করা হয়।

অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী গত নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে চতুর্থবারের মত এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ৬৩ বছর বয়সী এই নেতা রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান হয়। ওইদিন ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল; যার মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী।

এর দেড় মাসের মাথায় এ এইচ মাহমুদ আলী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু পান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। অন্যদিকে ইসলাম ও হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য অক্টোবরে মন্ত্রিত্ব খোয়ান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

২০১৫ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেওয়া হয় স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। পরের সপ্তাহে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মন্ত্রী এবং অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ওই দিন মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পান আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এর দুই দিন পর ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আ্যডভোকেট প্রমোদ মানকিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০১৬ সালের ১১ মে। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ জুন খাদ্য থেকে প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। গত ১৬ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হয়।

গত দুই বছরে বিভিন্ন সময় মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাপক কোনো পরিবর্তন আনেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিষয়সমূহঃ