ঢাকা মঙ্গলবার | ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কোটা সংস্কার
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী-চাকরিপ্রার্থীরা।
এতে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীতে পদযাত্রা করে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেও রাত ৮টার দিকে পুলিশের জলকামান ও টিয়ার গ্যাসের শেলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে চারুকলার সামনে অবস্থান নেন।
সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় চার সাংবাদিকসহ কয়কজন শিক্ষার্থী আহত হন।
ধাওয়ার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাইফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল আন্দোলনকারীদের মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। এর আগে আন্দোলনকারীদের টানা পাঁচ ঘণ্টার অবরোধে শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন কাজ শেষে ঘরমুখো মানুষ।
সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ কোটা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৪৪ ভাগে মেধায় নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরিপ্রার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ আন্দোলন আবারও জোরদার হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ১০ শতাংশের বেশি কোটায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। আন্দোলনের মুখে গত মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, চাকরিতে কোটা শিথিল করা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য কোটা থাকবে।
কোটা শিথিল হলেও আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের দাবি পূরণ হয়নি। কোটা ব্যবস্থার প্রকৃত সংস্কার হয়নি। তাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার দুপুর ২টার দিকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জমায়েত হন।
বঙ্গবন্ধুর পোস্টার হাতে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী ‘পদযাত্রা’ করে রাজু ভাস্কর্য দিয়ে নীলক্ষেত, কাঁটাবন ঘুরে বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগে অবস্থান নেন।
আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, তাদের কর্মসূচি অসহিংস, শান্তিপূর্ণ। সড়ক অবরোধ করা হলেও অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা মার খেতে রাজি; কিন্তু কাউকে আঘাত করবে না। সংসদের অধিবেশন থেকে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চাকরিতে কতভাগ কোটা রাখা যাবে তা নির্ধারণে কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন তারা।
কর্মসূচি চলার সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন আন্দোলনকারীরা।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. উজ্জ্বল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটায় শূন্য থাকা পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে; কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, কোটার শূন্য আসন অন্য কোটা দিয়ে পূরণ করা হবে।
আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে কয়েক দফা চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু অবরোধকারীরা সরে যাননি। রাত ৮টার দিকে পুলিশ আন্দোলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে। জলকামান এবং উচ্চশব্দের সাইরেনে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। ছত্রভঙ্গ আন্দোলনকারীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে পুলিশ।
আন্দোলনকারী ছাড়াও লাঠিপেটার শিকার হন প্রথম আলোর আসিফুর রহমান, বাসসের কামরুজ্জামান রেজা, বাংলা ট্রিবিউনের হালিম রেজা শোভন ও ইউএনবির ইমরান হোসেন।
বিষয়সমূহঃTags: কোটা সংস্কার, টিয়ারশেল, পুলিশ, শাহবাগ, সংঘর্ষ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম