ঢাকা সোমবার | ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি মহাসড়ক; পাশে চর্তুদিকে বড় বড় প্রশস্ত দেয়ালে আবদ্ধ জেলখানা। সবার নজরে স্থানটি খারাপ মনে হলেও কিছু মানুষের কাছে এটি সংশোধনাগার। এখানে এসেই অপরাধ জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন অনেকে। তেমনি মহিলা বন্দিদের কাছে আলোর দিশারীর মতো ধরা দিয়েছে ‘গাইবান্ধা জেলা কারাগার’। অনেকে ভাবছেন এ কেমন কথা? হ্যা এটাই সত্য। জেলার মহিলা বন্দিরা কারাগারে সুযোগ পাচ্ছেন নিজেকে সংশোধনের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ। তাদের স্বাভাবিক পূর্ণবাসনে দেয়া হচ্ছে সেলাই প্রশিক্ষণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কারাগারের গেট দিয়ে ঢুকতেই বড় বড় দালান-কোঠা। ওপারে যেতে পাড়ি দিতে হয় তালা ঝুলানো গেট। তবে, সেদিন গেট খোলার পর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারাগারের ভেতরে নয়নাভিরাম ফুল-ফলের গাছ, মাছ চাষ, খাবারের ব্যবস্থা, খেলাধুলা, বিনোদনের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।
আমাদের কথা হয় সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত মহিলা বন্দিদের সাথে। মহিলা বন্দি রেহেনা বেগম, ৩০ বছর ধরে আছেন সংশোধানাগারে। তিনি জানান, এখানে এসে প্রথমে খুব খারাপ লাগতো। সময় কাটতো না। এসময় আর্শীবাদের মতো তার জীবনে আসে সেলাই প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণ নিয়ে এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ, চট, বেত ও পুঁথির ব্যাগ তৈরীসহ নানান নকশা শিখেছেন তিনি। এখন এ কাজের উপার্জিত অর্থ জমা রাখাসহ নিজ প্রয়োজনে খরচ করছেন তিনি।
শুধু রেহেনা নন, জেলা কারাগারে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক নারী। কারাগার থেকে সংশোধনের পর নতুন জীবনে পর্দাপনে এ প্রশিক্ষণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে জানান লাবণী, জেলেনা ও শাহানাজ বেগম। তারা জানান, এ কাজ পুর্ণবাসনসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জেলা কারাগারের এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সেলাই প্রশিক্ষক মোছা. বকুল আক্তার বলেন, এ প্রশিক্ষণ নিলে ভবিষ্যত জীবনে নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মহিলা বন্দিরা ভূমিকা রাখতে পারবেন। এজন্যই আমদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াশ।
এদিকে, জেলকে শাস্তির স্থান নয়, সংশোধনাগার বলে জানালেন, গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মাহবুবুল আলম। এর অংশ হিসেবে মহিলা বন্দিদের পূর্ণবাসনে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে এ প্রশিক্ষণ সহায়ক হবে বলেও জানান তিনি। এধরনের উদ্যোগে একজন মানুষ শুধু সংশোধন নয়। গড়ে তুলবে কর্ম দক্ষতাও-এমনটাই মনে করছেন গাইবান্ধার সচেতনমহল।
লেখক: কমিউনিটি ফেলো, রেডিও সারাবেলা
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম