ঢাকা বৃহস্পতিবার | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপির নির্বহিী কমিটির সভা
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা যাবে না। মোতায়েন করতে হবে সেনাবাহিনী।
৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার প্রথম সেশনে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্য মামলা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঘরে একটা মানুষ বন্দি থাকলেও তার নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমি অফিসে, বাসায় বন্দি থাকি। কীভাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গিয়ে গাড়ি পোড়াব?’
‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তাদের (আওয়ামী লীগ) মহিলারা রাস্তায় রান্না করেছে, কর্মসূচি পালন করেছে। পুলিশের হাতে কামড়ও দিয়েছিল। এখন আমাদের দলের মহিলা নেত্রীদেরকে কারাগারে নিচ্ছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।’
সরকার নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কীভাবে এককভাবে ক্ষমতায় আসবে, সেই ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করছে। শ্মশানও দখল করেছে। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত আমাদের পাশাপাশি হিন্দুরাও। তারা ওখন বলছে, অনেক ভুল করেছি। আর নৌকার কাছে যাব না। নৌকা কিছু দেয়নি, সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে কি পার্থক্য তারা তা বুঝতে পেরেছে।’
বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিচার বিভাগের কী অবস্থা! বিচার বিভাগ হুকুম মানতে বাধ্য হয়।’
‘সহনশীল ঘুষ’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী সহনশীল ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। শিক্ষামন্ত্রী ভালো মানুষ, ভদ্র মানুষ। তাই সহজ-সরল ভাষায় বলে দিয়েছেন।’
‘বাণিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ৪০ টাকার নিচে সম্ভব না। এখনো ৪০ টাকার চাল আসেনি। তাদের ওয়াদা ছিল ১০ টাকা। সার্বিক পরিস্থিতি দেখলে বলা যায়, মানুষ এই দুঃশাসন-অত্যাচার-জুলুম থেকে মুক্তি চায়। মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। সেই পরিবর্তন জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি খবর রেখেছি। আপনারা মনে করছেন আমি খবর রাখি না? যারা বেইমানি করেননি, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা অন্যদিকে রাখেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে না।’
‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তখন যারা সাথে ছিলেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। ক্ষমা একবার হয়, বারবার হয় না। আমরা ক্ষমা করেছি। আমি যেখানেই থাকি না আপনাদের সাথেই আছি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি ভীত নই, আমি ভয় পাই না। আমি যেখানেই থাকি, আপনাদের সাথেই আছি। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। অতীতেও পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।’
‘সময় এসেছে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদেরকে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।’
এর আগে সকালে সভার শুরুতে নির্বাচনী প্রচারণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ডুবন্ত নৌকাকে টেনে তুলতে চায় বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ‘আজ জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যার প্রমাণ বিএনপির এই জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা।’
‘জনগণের অধিকার হরণ করতে ডিজিটাল কালাকানুন তৈরি করছে সরকার। ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এত আগেই কেন নির্বাচনী ক্যাম্পেইন? এর মানে হচ্ছে নৌকা এত ডুবেছে যে এখন থেকেই নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু করে ডুবন্ত নৌকাকে টেনে তুলতে হবে।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে অস্ত্রের মুখে গুম-খুন-নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী লীগ দেশকে ভয়ভীতির রাজ্যে পরিণত করেছে।’
বেলা ১১টা আট মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সভা। এই সভা শুরুর চার মিনিট আগে উপস্থিত হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সভার শুরুতে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে এই সভার আগ পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বরেণ্য ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় রাজনীতিক, পেশাজীবী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংবাদকর্মী, দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের।
বিষয়সমূহঃTags: খালেদা জিয়া, নির্বাহী কমিটির সভা, বিএনপি
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম