ঢাকা মঙ্গলবার | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ ডেস্ক
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ | ১০:৩৮

হিমাগারে এতো আলু কীভাবে জমে গেলো?

tesst

বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলায় একজন হিমাগার মালিক তার হিমাগার খালি করতে এক লিটার দুধের বিনিময়ে গবাদি পশু খামারিদের এক বস্তা করে আলু দিচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিমাগারে জমে গেছে প্রচুর পরিমাণ গত মৌসুমের পুরনো আলু । দাম ভয়াবহ কম পাচ্ছেন বলে কৃষকরা উৎপাদন খরচ, হিমাগার ভাড়া ও ঋনের টাকা শোধ করতে পারছেন না। তাই তারা হিমাগারে রাখা আলু নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।

এতো আলু কীভাবে জমে গেলো?

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের আলু চাষী মোঃ শরীফুল ইসলাম এ বছরের মার্চ মাসে স্থানীয় হিমাগারে সাড়ে পাঁচশো বস্তা আলু রেখেছিলেন। কিন্তু এখনো এর একটি বড় অংশ হিমাগারেই রয়ে গেছে।

এলাকার আরো অনেক আলু চাষীর মতো হিমাগার থেকে ইদানিং দূরে থাকছেন তিনি। মি: ইসলাম বলছেন, অনেক আলু চাষী ভয়ে স্টোরেজের কাছে যেতে চাইছেন না।

“আমরা এক টাকা দেড় টাকা পাচ্ছি কেজি প্রতি। আলু বিক্রি করে স্টোরেজ মালিকদের ভাড়াই পরিশোধ করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে আলুগুলো স্টোরেজকে ছেড়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে। স্টোরেজ মালিকদের কাছে আমাদের লোন আছে। আলু তুলতে গেলে সেটাও তো দিতে হবে। আলু বিক্রি করে লোনের টাকা দেয়া তো দূরের কথা স্টোরেজ ভাড়াই দিতে পারছি না,” বলেন মি: ইসলাম।

গত বছর আলু উৎপাদন ও স্টোরেজ ভাড়া সহ মি: ইসলামের কেজি প্রতি খরচ পড়েছিল ১৪ টাকা। তার মতো কৃষক আলু বিক্রি করেন ব্যাপারীদের কাছে।

গত বছর ব্যাপারীদের কাছে সর্বোচ্চ ২২ টাকাতেও আলু বিক্রি করেছেন। কিন্তু তার এলাকায় ব্যাপারীরা এখন পুরনো আলু কেজি প্রতি মাত্র দু টাকা করে দিচ্ছেন। আর তাই আরো অনেক কৃষকের মতো পুরনো আলু তিনি হিমাগারেই ফেলে রাখছেন।

এতে হিমাগারের মালিকরাও পড়েছেন বিপাকে।

ঠাকুরগাঁওয়ের হাওলাদার হিমাগার লিমিটেড হিমাগার খালি করতে এক লিটার দুধের বিনিময়ে গবাদি পশু খামারিদের এক বস্তা করে আলু দিয়েছেন।

হিমাগারের মালিক আব্দুস সালাম হাওলাদার বলছেন কেনো তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন?

আড়তদাররা বলছেন এত আলু নিয়ে তারাও বিপাকে

“আমাদের হিমাগারটিতে ২২ হাজার বস্তার মতো আলু রয়ে গেছে। পাইকাররা ৬০ কেজির বস্তায় ৩০ টাকার উপর দাম বলে না। কিন্তু একটা বস্তায় আমাদের খরচ সাড়ে সাতশো টাকা। ৩০ টাকায় বস্তা বিক্রি করলে আমার কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। আমি দেখলাম আমার এখানে এক লিটার দুধের দাম ৪০ টাকা। এক লিটার দুধের দামে এক বস্তা আলু দিলে দশ টাকা তো বেশি আসবে!”

তবে মি: হাওলাদার এত দুধ দিয়েই বা কি করবেন। তাই এ দুধ তিনি গরীবদের দিয়ে দিয়েছেন। তবুও হিমাগার খালি করা দরকার। কারণ ইতিমধ্যেই নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। হিমাগার খালি না হলে এই শীত মৌসুমের শেষে সেগুলোর জন্য হিমাগারে জায়গা হবে না।

আলু টেঁকে মাত্র এক বছর। বাংলাদেশে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে দেশব্যাপী ৩৮০ টি হিমাগারে ৪ লাখ মেট্রিক টনের মতো পুরনো আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

হিমাগার মালিকদের সমিতি বলছে আসল পরিমাণ এর থেকে আরো অনেক বেশি।

পুরনো আলু বিক্রি না হয়ে পড়ে রইল কেন?
ঢাকার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেলা পুরনো আলুর স্তূপের উপরে অনেক আড়তদার মুখ ভার করে বসে আছেন। তাদের একজন মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলছেন, “আলুর ফলন খুব বেশি হয়েছে। কিন্তু এত আলু খেয়ে শেষ করা যায়নি। তাই সব বিক্রি করাও সম্ভব হয়নি। আর এবছর আলু বিদেশে এক্সপোর্টও হয়নি। তাই অনেক আলু রয়ে গেছে। এখন অনেক আলু তাই ফেলে দিতে হবে।”

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, নেপাল সহ আরো কিছু দেশে আলু রপ্তানি করে থাকে। কিন্তু এবছর নগণ্য পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। তাও আলু আরো বেশি রয়ে গেছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ. মাহবুব আহমাদ বলছেন বিপাকে পড়া কৃষকদের সহায়তায় তারা সারপ্লাস এলাকা থেকে ডেফিসিট এলাকায় আলুর ফ্লো বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

”যে জেলায় বেশি ফলন হয়েছে সেখান থেকে যে জেলায় আলুর সরবরাহ কম আছে বা চাহিদা বেশি আছে সেখানে আমরা আলু বেশি পাঠাচ্ছি। এই বছর যেটা হয়েছে বিক্রি না হওয়ার কারণে কোল্ড স্টোরেজে যে আলু থেকে গেছে সেগুলো রেশনিং সিস্টেমে বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারি বলে সরকারের কাছে সাজেশন দিয়েছিলাম। অথবা তা রিফিউজি ক্যাম্পে দিতে পারি। তবে সে ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক কোন খবর আনা সম্ভব হয়নি।”

গত মৌসুমের এত পুরনো আলু বিক্রির কোন আশা নেই বলে অনেক এলাকায় কৃষকরা তা নাম মাত্র মূল্যে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বিষয়সমূহঃ