ঢাকা সোমবার | ২৫শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কাজী মুস্তাফিজ, সিনিয়র রিপোর্টার
১ জুন, ২০১৮ | ১২:০৫

সাইবার পুলিশ ব্যুরোর কাজ শুরু

tesst

দেশে প্রযুক্তির সুবিধা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সরকার নতুন আইনও করেছে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনও বসে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে পুলিশের নতুন ইউনিট ‘সাইবার পুলিশ ব্যুরো’র কাজ।

যাবতীয় সব প্রক্রিয়ার পর সবশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের এক সভা গত সোমবার (২৮ মে ২০১৮) সম্পন্ন হয়েছে। এতে পুলিশের নতুন এ ইউনিটের কার্যক্রমের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়া হয়েছে এবং জনবলসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত প্রায়।

সোমবারের সভায় উপস্থিত থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ রেজাউল হায়দার আগামীনিউজ২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টারেরও প্রকল্প পরিচালক ছিলেন।

শেখ রেজাউল হায়দার জানান, সিআইডির অধীনে নতুন এই ইউনিটের নেতৃত্বে থাকবেন একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তার অধীনস্থ থাকবেন অতিরিক্ত ডিআইজি, বিশেষ পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার, সহকারি পুলিশ সুপার, পরিদর্শক, উপপরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এছাড়াও পুলিশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সাপোর্টিং স্টাফ হিসেবে থাকবেন আরো পাঁচ-ছয় জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্র জানায়, এই ইউনিট গঠনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ থাকায় কাজ দ্রুত এগিয়েছে। দাপ্তরিক যাবতীয় প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী চান এই ইউনিট দ্রুত কাজ শুরু করুক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রমেই ইন্টারনেটসহ নানা সুবিধা পৌছানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই ইতিবাচক।

কী থাকছে এই ইউনিটে
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘সাইবার পুলিশ ব্যুরো’র জনবল সংখ্যা হবে প্রায় ৫০০ জন। শুরুর দিকে বিভাগী পর্যায়ে এবং পরে জেলাভিত্তিক অফিস থাকবে এই ইউনিটের।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য দাফতরিক প্রক্রিয়াসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। শিগগির এই নতুন ইউনিটের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

এই ইউনিটের কর্মকর্তারা অপরাধের ধরন অনুযায়ী একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে, হ্যাকিং, সাইবার ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, আইটি এনাবলড ক্রাইম, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন এবং ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম ও স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম মিলে একটি শাখা। এছাড়া ডিজিটাল ফরেনসিক ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক দুটি শাখা থাকছে।

কেন সাইবার পুলিশ
সমাজে প্রচলিত একই ধরনের অপরাধ বার বার সংঘটিত হয়। কিন্তু সাইবার জগতে নতুন নতুন অপরাধের ধরন সামনে আসে। সাইবার অপরাধের সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো জড়িত। আর এসব অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা সব সময় নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়। তাই পুলিশ কর্মকর্তাদেরও এসব মামলা তদন্তে প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার মিলব্যারাকে সিআইডির সাইবার ট্রেনিং সেন্টারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলছে। এতে সারা দেশ থেকে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ও উপপরিদর্শক (এসআই) পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

পুলিশের নতুন এই ইউনিটের কাজ শুরু হলে সারা দেশের সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত সব মামলা ও ঘটনার তথ্য মনিটরিং হবে একটি অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে। অর্থাৎ ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সারা দেশের অপরাধচিত্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের সুবিধা পাবেন অনলাইনেই। এর ফলে অপরাধের ধরণ অনুযায়ী দ্রুত ও প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।

যেভাবে শুরু হয় প্রক্রিয়া
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সাইবার পুলিশ ব্যুরো গঠনের বিষয়ে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ পুলিশ সদর দফতর থেকে সিআইডির মাধ্যমে ৫৭৫ জন জনবল ও ১০০ গাড়ির প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাইয়ের পর গত ২১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫০৫ জনবল ও ৮৫টি গাড়ি অনুমোদন দেয়। এরপর প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যায়। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভায় বিষয়টির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রণালয়ে সব শেষ প্রক্রিয়া শেষে শিগগির শুরু হবে ইউনিটের কাজ।

২০১৫ সালে দেশে ২৬৭টি সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭১টিতে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে অন্তত ১৩শ’ সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ছাড়া জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত ৮২ ভাগ তরুণ অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্ধকার পথে গেছে, যা সাইবার অপরাধের ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাইবার পুলিশ ব্যুরো গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

আগামীনিউজ২৪.কম/কেএম