ঢাকা বুধবার | ১৩ই মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ | ১২:২৮

চকবাজার ট্রাজেডি

tesst

প্রথমে এক পিকআপের সাথে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ, শোনা যাচ্ছে সেই পিকআপে ছিল সিলিন্ডার গ্যাস, সেটার বিস্ফোরণ আগে হয় অথবা হয় প্রাইভেট কারের সিএনজি বিস্ফোরণ৷

এর পাশেই ছিল হোটেল, হোটেলে রান্না হচ্ছিল গ্যাসে, সেই গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ, সাথে থাকা বৈদ্যুতিক খুটিতে ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ।

সময় ৩০ সেকেন্ড!

অন্য একটি স্থানীয় সূত্রে জানা যায় –

যানজটে আটকে ছিল একটি পিকআপভ্যান। প্রথমে তার সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায়। আগুন ধরে পাশের একটি সিএনজি অটোরিকশায়, মোটরসাইকেলে।

এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের চুড়িহাট্টা এলাকার পুরো চৌরাস্তায়। একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে প্রতিটি গাড়ির সিলিন্ডার। পাশের দুটি রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডারগুলোও বিস্ফোরিত হয়। যারা ছিলেন গাড়িতে, মোটরসাইকেলে, অটোরিক্সা, রিক্সা কিংবা অন্য কোন বাহনে অথবা বাড়ি ফিরছিলেন পায়ে হেটে, যারা ছিলেন আশে পাশের দোকানে, কেউ রক্ষা পায়নি। যানজটে আটকে পড়া মানুষগুলোর ছুটে পালানোরও কোন সুযোগ ছিলো না।

নিহতদের অনেকেই হয়তো স্থানীয় মানুষ নয়, কারণ তারা নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করছিলেন।

আগুন ছড়িয়ে গেল ভবনে, ছিল নেল পালিশের কেমিকেলের গোডাউন থেকে শুরু করে পারফিউমের কেমিক্যাল। এমনকি লাইটার রিফিলের গ্যাসের ছোট ছোট জার। দুদিন আগেও সাত ট্রাক কেমিক্যাল ঢুকেছে ওই এলাকায়।

গেল সপ্তাহেও দক্ষিণের মেয়র মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে হাতজোড় করেছেন কেমিকেল গোডাউন সরিয়ে নিতে, কেউ পারছে না তাদের সরাতে, এক এক বাড়িতেই ১৫-২০ টা গোডাউন আর শিল্পমন্ত্রনালয়ের খাতা বলছে পুরো পুরান ঢাকাতেই এ সংখ্যা ১০০ এরও কম, মানে সিংহভাগই অনুমতিহীন।

পুড়ে ছাই হওয়া ওয়াহিদ ম্যানসনের ওয়াহিদ সাহেব মারা গেছেন আগেই, তাদ দু ছেলে এ ভবনে থাকতেন, ভাগ্যের কি পরিহাস, তারা যে কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দিলেন, তার বিস্ফোরনেই প্রাণ গেছে নিজেদের পরিবারের লোকদের।

পরদিন ছুটি থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা একটু গুছিয়ে নিচ্ছিলেন, সেই গোছানোয় চিরতরে গোছানো।

ফায়ার সার্ভিস কি করেনি? সারারাত চেষ্টা করেছে, ৩৭ টা ইউনিট ছিল, বিশাল গাড়ি নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়েছে, তাও ৪ টা হেলিকপ্টার। কী আর হয় তাতে? কেমিকেলগুলো সে পানিকে পাত্তাই দিতে চাইনি, পুরোটা জ্বলে, জালিয়ে তারপর নিভেছে প্রায় ৮ ঘন্টা পর!

মৃতের সংখ্যা ৭৮, বাড়ার আশংকা, হতাহত অর্ধশত।

পুরান ঢাকার এই মানুষগুলো বহু আগে থেকেই মাইনফিল্ডে বাস করে। আমরাই বা কতটা নিরাপদ? প্রতিনিয়ত যে গাড়িটাতে চড়ছি, সেটার সিলিন্ডার কতটা নিরাপদ? গ্যাস সিলিন্ডারের এই শহর, কতটা ভয়ঙ্কর মরণফাঁদ নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!

নিমতলি থেকে আমরা শিক্ষা নেইনি, কাজেই একের পর এক উচিত শিক্ষা প্রকৃতিই দেবে, এই ই নিয়ম।

তথ্যসূত্র – সাজিদুল শুভ্র, আরাফাত সিদ্দিকী

বিষয়সমূহঃTags: