ঢাকা রবিবার | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হলো চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের জোট। ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনছে এ দুই প্রতিষ্ঠান।
সোমবার রাজধানী ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা ঐতিহাসিক ঘটনা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হতে যাচ্ছে। এই অংশীদারি দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়তা করবে।”
এমন বিদেশি বিনিয়োগ দেশের পুঁজি বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “এমন বিদেশি বিনিয়োগ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আর এ ধরনের বিনিয়োগ পুঁজি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।”
তাঁর মতে, “দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে এমন কৌশলগত বিনিয়োগ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।”
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মাজেদুর রহমান, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান পেন শুয়েশিয়ান ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ওয়ান জেনজুন শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা এবং অর্থনীতির সম্ভাবনার কারণেই চীন এই বাজারের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হয়েছে বলে জানান খায়রুল হোসেন।
২০১৩ সালে করা স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ-সংক্রান্ত ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের জোটের কাছে এ শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। এ জন্য গত সেপ্টেম্বরে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। গত ৩ মে চীনের জোটের শেয়ার কেনার প্রস্তাবটি কিছু শর্ত সাপেক্ষে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে বিএসইসি।
শুরু থেকেই ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী বা মালিকানার অংশীদার হওয়ার জন্য চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের জোটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই), যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট। তবে শেয়ারের দর প্রস্তাবে চীনের জোট এগিয়ে ছিল।
ভারতের এনএসইর নেতৃত্বে গঠিত জোট শেয়ারের দর প্রস্তাব করে ১৫ টাকা। অন্যদিকে চীনের প্রতিষ্ঠানের জোটটি ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের বা ফেসভ্যালুর প্রতিটি শেয়ার ২১ টাকা দামে কিনছে।
ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে চীনের জোটটি ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনেছে, যা ডিএসইর মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ। এ খাতে চীনের বিনিয়োগ দাঁড়াবে প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকা।
আগামী তিন মাসের মধ্যে চীনের বিনিয়োগের এ অর্থ দেশে চলে আসবে, যা ডিএসইর বিদ্যমান শেয়ারধারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেয়ারের দামের বাইরে চীনের জোটটি ডিএসইকে ৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের কারিগরি সহায়তা দেবে।
সোমবারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ওয়ান জেনজুন বলেন, এখন থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অর্থনৈতিক ও কারিগরি উন্নয়নে কাজ করবে চীনের এই দুই স্টক এক্সচেঞ্জ।
সূচক ও লেনদেন কমেছে
এদিকে চুক্তি সইয়ের দিন গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক গত কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে কমেছে। ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট কমেছে এবং সিএসইর প্রধান সূচক ৩১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমেছে।
গতকাল উভয় পুঁজিবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। গত রবিবার লেনদেন হয়েছিল ৪৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম