ঢাকা সোমবার | ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করে লাভ হবে না মন্তব্য করে দলটি আগামী নির্বাচনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছন বিএনপির চেয়ারপারপাসন খালেদা জিয়া।
ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে তিনি একথা জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে। আমাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যতই চেষ্টা করা হোক না কেন কোন লাভ হবে না। আমারা নির্বাচনে যাবো। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে এ দেশে কোনও নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার দরকার। আমরা এখনো বলছি- শেখ হাসিনার অধীনে আর এই জাতীয় সংসদকে বহাল রেখে নির্বাচনে যাবে না।
তিনি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ২০১৪ সাল আর এখন এক নয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশের সব থেকে বড় জোট। তাই আমাদেরকে বাদ দিয়ে কোন নির্বাচন এ দেশে আর হবে না।
খালেদা জিয়া গুম-খুন আর বিচাবহির্ভূত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকার পুরো দেশকে কারাগারে পরিনত করেছে। আমরা সকলে বন্দি আর শেখ হাসিনা একা মুক্ত।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মানুষ এখন কষ্টে রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। তারা এখন পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তনের জন্য তাদের ভোটাধিকার দরকার। যা এই সরকার দিতে চায় না।
তিনি বলেন, দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারের লোকজন লুটপাট করে টাকা সুইস ব্যাংকে রাখছে। এই টাকা দেশের জনগণের। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে এই সেতু নির্মাণ করলে কেউ উঠতে যাবে না। কারণ, অনেক ঝুঁকি আছে।
দলের নেতাকর্মীদের গুম আর নির্যাতনের বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এসব কাজের জন্য পুলিশ দায়ী না। তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদেরও সন্তান রয়েছে। তাই সরকার আপনাদের দিয়ে অপকর্ম করাতে চাইলেও আপনারা করবেন না। এসময়ে খালেদা জিয়া দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, পাকিস্তান আমলে এ দেশের জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করতে আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা কোন দায়িত্ব পালন করেন নাই। তাদের একজন নেতার বইতে লেখা হয়েছে- শেখ মজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষনার জন্য বলা হলেও তিনি তা করেননি। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের কোনও নেতা তাদের দায়িত্ব পালন না করলেও দেশপ্রেমিক সৈনিকরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর দেশের জন্য নিজের ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই আমি বলবো- স্বাধীনতার ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেয়নি, জিয়াউর রহমানই দয়েছে।
ছাত্রসমাজের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, এই ছাত্র-যুব সমাজরাই দেশের পরিবর্তন আনতে পারে। তারা যুদ্ধ করেছে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এবারও এই ছাত্রদল আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবে। কিন্তু এর আগে ক্যামেরা আর ছবি নির্ভর রাজনীতি পরিহার করে দলের কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। দলের নির্দেশনা মতো কাজ করতে হবে।
তিনি ছাত্রসমাজকে লেখাপড়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এর পাশাপাশি বিএনপির ভিশন ২০৩০কে আরো বেশি করে বুঝতে হবে। এই ভিশনকে জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
বিশেষ অথিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ থেকে এই সরকারের পতনের দিন শুরু। তিনি বলেন, বিএনপি আগেও বলেছে- ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর, স্বৈরশাসনের পতনের বছর।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে। এর জন্য ছাত্রদলকে নব্বইয়ের মতো নেতৃত্ব দিতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকার সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আর এই জন্যই তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেটে তালা মেরে দিয়েছে। তাই আজকের এই দিনটিকে কালো দিন হিসেবে আগামীতেও চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কোন জনসমর্থন নেই বলে ঘরোয়া আয়োজনেও কোন অনুষ্ঠান করতে ভয় পায়। আজকের দিনে শপথ নিতে হবে- দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক হাবি উন নবি খান সোহেল সহ আরো অনেকে।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম