ঢাকা সোমবার | ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নিউজ
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ | ১৫:০৩

তৃণমূলে কেন্দ্রীয় নেতারা

দলকে শক্তিশালী করতে বিএনপির তোড়জোড়

tesst বিএনপির দলীয় পতাকা

তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন এবং নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার জন্য ফের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২৫টি টিম গঠন করেছে দলটি। কয়েকটি টিম সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদেরকে সাংগঠনিক সফর শেষ করতে নির্দেশনাসহ দেয়া হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে বেশ কিছু টিম তাদের কার্যক্রম শেষ করেছে বলে জানা গেছে। তবে কিছু টিম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক সফর শেষ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে।

জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত দলনেতার কাছে গত সপ্তাহে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে এ সংক্রান্ত একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদেরকে টিম লিডার করা হয়েছে। এসব টিমের নেতারা গ্রুপ করে দেশব্যাপী প্রায় ৮০টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। সফর শেষে দলনেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরে সংশ্লিষ্ট জেলার সার্বিক পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন জমা দেবেন। অতঃপর একটি সার্বিক প্রতিবেদন তৈরি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করবেন সিনিয়র নেতারা। তারা আগামী নির্বাচন ঘিরে যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যাপারেও কথা বলবেন। বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে কোনো দ্বন্দ্ব বা টানাপড়েন থাকলে সেসব বিষয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম দেখভাল করবে।

সর্বোপরি বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না মর্মে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সাংগঠনিক সফর নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কাজই হলো সাংগঠনিক সফর করা, নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এই সফর করব। এই সফরের মধ্যে চলমান বৈরী পরিবেশের মধ্যে কিভাবে রাজনীতি করতে হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনীতির সার্বিক বিষয় নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করা হবে।

জানা গেছে, কয়েক দিন আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জেলা সফরে নেতাদের করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশক্রমে এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে কর্মিসভা করার কথা বলা হয়েছে।

পাশাপাশি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মিসভার দিনণ চূড়ান্ত করা এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের তা অবহিত করতে বলা হয়েছে। জেলা বিএনপির উদ্যোগে এসব কর্মিসভায় টিমপ্রধানদেরকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের অবস্থান এবং দলের ঐক্য নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া টিমকে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) এবং মানিকগঞ্জের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বরিশাল জেলা ও মহানগর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, মির্জা আব্বাস রাজশাহী জেলা ও মহানগর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সিলেট জেলা ও মহানগর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এনাম আহমদ চৌধুরী গোপালঞ্জ জেলা, মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী নেত্রকোনা, বরকত উল্লাহ বুলু ঢাকা জেলা ও মুন্সীগঞ্জ, আহমেদ আযম খান শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন গাজীপুর জেলা ও মহানগর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান টাঙ্গাইল জেলা।

জেলা সফরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক দলনেতা জানান, প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃত্বের দুর্বলতা খুঁজে বের করা, দ্বন্দ্ব-কোন্দল-গ্রুপিং থাকলে তা নিরসন করা, কর্মিসভার মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ভবিষ্যৎ আন্দোলনে তৃণমূলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সংস্পর্শে তৃণমূলের নেতারা অনুপ্রাণিত-উজ্জীবিত হবেন বলে তারা আশা করেন।

সাংগঠনিক সফরে বরিশালে অবস্থানরত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা তৃণমূলে কর্মিসভা করব। সারা দেশেই কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করবেন। এ জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল মহানগর, দুপুরে বরিশাল দক্ষিণ, আগামীকাল শুক্রবার বরিশাল উত্তর মহানগরের কর্মিসভায় তিনি অংশ নেবেন বলে জানান।

ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, এই সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আরো সক্রিয় হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জেলাপর্যায় তথা তৃণমূলে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত করতে সারা দেশে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা সফর করবেন। তারা কর্মিসভা করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, তৃণমূলের সংগঠন আরো শক্তিশালী করতে জেলা সফরের বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট জেলা সফর শেষে নির্দিষ্ট সময়েই অগ্রগতি প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, বিগত দু’টি আন্দোলনের পর সরকারের মামলা-হামলা, নির্যাতন-নিপীড়নে সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা জর্জরিত। এ অবস্থায় তাদের সক্রিয় ও উজ্জীবিত করার অংশ হিসেবে এই সাংগঠনিক সফর। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলনে আমরা আবারো তৃণমূলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন হবেনা, নেতাদের সফরকালে তৃণমূলে এই বার্তাই দেয়া হবে। সূত্র: নয়াদিগন্ত