ঢাকা মঙ্গলবার | ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অতীতে বিএনপির সব আন্দোলন-সংগ্রামে মূল ভূমিকা পালন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সংগঠনের অবস্থা আজ বেহাল। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে সংগঠনকে বাঁচানো হোক। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা বেশি পছন্দ ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের।
জানা গেছে, দুই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল। রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৪৩ সদস্যের বিশাল আকৃতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
সেই থেকে একাধিকবার ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। তারা বৈঠক করে দ্রুত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের দাবিতে বিএনপি মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বর্তমানে জেলে রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মাসখানেক আগে কারামুক্ত হয়েছেন। যদিও ছাত্রদলের শীর্ষ তিনজন নেতা বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাদের নামে অর্ধশতাধিক মামলা ঝুলছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে তাদের পদ দেয়ার সময়ই কথা ওঠে ছাত্রদলেও নতুন নেতৃত্ব আসছে।
জানা গেছে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চেয়েছিলেন ছাত্রদলের নতুন কমিটি। সে মোতাবেক কাজও চলছিল। কিন্তু বিএনপির কয়েকজন নেতা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সে সময় ভুল বুঝিয়ে কমিটি দেয়া থেকে বিরত রাখেন।
সম্প্রতি বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ফলে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনেও শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
তৃণমূল থেকে নতুন কমিটি গঠনের চাপও রয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে বা কোরবানি ঈদের আগেই নতুন কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানান, ১০৯টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চার বছরে অর্ধশতাধিক শাখায় নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। কয়েকটি সাংগঠনিক জেলা শাখার কমিটি শিগগির দেয়া হচ্ছে।
বাকি কমিটিগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। অধিকাংশ আংশিক কমিটির মেয়াদ শেষ। সম্প্রতি নতুন কিছু জেলা কমিটি গঠন করা হলেও এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।
এরপরও যেসব জেলায় নতুন কমিটি হয়নি তা শিগগিরই শেষ করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ছাত্রদলে শৃঙ্খলা ও গতি বজায় রাখার স্বার্থে হলেও নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি বলে তাদের অভিমত।
ছাত্রদলের জেলা-মহানগর, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রায় সবগুলোই গড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ১০ বছর। কোনো কোনো সাংগঠনিক জেলার মেয়াদ এক যুগেরও বেশি সময় ছাড়িয়েছে।
সেখানকার ছাত্রদল সভাপতির বয়স ৪০-৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে। যেমন গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি হান্নান মিয়া হান্নু এখন মহানগর বিএনপির নেতা এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।
তার মতো বহু নেতা ছাত্রদল করেই জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছেন। দেশের অনেক জেলায়ও একই অবস্থা। এসব জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বয়সে ৪০ ঊর্ধ্বে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও পৌরসভা পর্যায়ে ছাত্রদলের কমিটি বলতে কিছু নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী নির্যাতন, টিউশন ফি বৃদ্ধিসহ কোটাবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রদলের কার্যকর কোনো ভূমিকা ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েই জানান দেয় ছাত্রদল।
রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণায় সরব থাকেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা রাজনীতিকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকনির্ভর প্রচারণা থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোকে বেরিয়ে আসা উচিত।
মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বর্তমান কমিটির বড় অংশ। তারেক রহমানকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তবে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিষয়টি ঝুলে আছে।
এরপরও আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শীর্ষ পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ : জানা যায়, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। ফলে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে তাদের কোনো পদে রাখার সম্ভাবনা নেই।
এবার ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, মামুন হোসেন ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, ইসহাক সরকার প্রমুখ। তাদের সবাই একাধিক মামলার আসামি। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন মামুন বিল্লাহ, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, মফিজুর রহমান আশিক, নূরুল হুদা বাবু, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, কাজী মোকতার, মির্জা ইয়াসিন, আবদুর রহিম সেতু, নাহিদুল ইসলাম সুহাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন। তারা সবাই শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, আমরা যে সময় ছাত্র রাজনীতি করেছি এখনকার মতো তখন কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি ছিল না। এখনকার ছাত্রনেতাদের মতো বাড়ি-গাড়িও ছিল না। ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্রদলের আন্দোলনের তোড়ে টিকতে পারেনি স্বৈরাচার এরশাদ সরকার। কিন্তু আজকে ছাত্রদলের রাজনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। যত দ্রুত সম্ভব ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। যারা দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছে তাদের তো জায়গা দিতে হবে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
বিষয়সমূহঃ
পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ
শিরোনাম